এসএমই স্টার্টআপদের সহজ শর্তে ঋণ ও বিশেষ কর সুবিধার দাবি

এসএমই স্টার্টআপদের জন্য সহজশর্তে ঋণ প্রাপ্তি, কর ও ভ্যাটের হার হ্রাস, বিশেষ কর সুবিধা প্রদান এবং কর প্রদানে প্রক্রিয়া সহজীকরণের দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২৩ মার্চ) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এসএমইদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এ দাবির বিষয়টি উপস্থাপিতি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমির উদ্দিন যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ডসের ম্যানেজিং পার্টনার এসকে মো. তারিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার অভাব, হিসাবরক্ষক ও অডিটরদের প্রশিক্ষণের স্বল্পতা এবং এফআরসিএস বাস্তবায়নে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে এটি বাস্তবায়নে আগ্রহ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়াও এখাতের উদ্যোক্তাদের সম্প্রসারণে সহজশর্তে ঋণ প্রাপ্তি, কর ও ভ্যাটের হার হ্রাস, এসএমই স্টার্টআপদের জন্য বিশেষ কর সুবিধা প্রদান এবং কর প্রদানে প্রক্রিয়া সহজিকরণ করা একান্ত জরুরি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায়ে রেখে এসএমইদের জন্য আইএফআরএস অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমাদের সব এসএমইদের ক্ষেত্রে এটির বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমইদের আগ্রহী করে তুলতে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, কর প্রদানে কমপ্লায়েন্স বাড়ানো, পুঁজিবাজার হতে মূলধন সংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে এসএমইদের আইএফআরএস বাস্তবায়নে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, আমাদের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি এবং আইএফআরএসে এসএমইখাতের উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি, তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করবে, যার মাধ্যমে এখাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনায়নের পাশাপাশি এসএমইদের অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণে সহায়তা করবে।

আইএফআরএসর মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের কমপ্লায়েন্স বাড়বে, সেই সঙ্গে এখাতের উদ্যোক্তাদের অধিকহারে করজালের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে কর আহরণের হার বৃদ্ধি করবে। সর্বোপরি আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে আরও অধিকহারে প্রশিক্ষণ প্রদানের উপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমির উদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আইএফআরএস বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে, তবে এটি বস্তবায়নে বিশেষ করে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান একান্ত আবশ্যক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশে পরিচালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউন্ট্যান্টস) না থাকায়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবরক্ষণে নানাবিধ প্রতিবন্ধকার মুখোমুখি হতে হয়। তবে, সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে এবং উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে এফআরসিএস বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হওয়ার ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ৮০টি দেশে এফআরসিএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের একাউন্টিং সফটওয়্যার প্রদান করা হলেও দক্ষতা এবং আগ্রহের অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয়নি। এফআরসিএস’র অধিকতর বাস্তবায়নে তিনি সহজীকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআইর আহ্বায়ক লুৎফুল হাদী বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ২২০০ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, যার মধ্যে প্রায় ৬০০জন এ কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করে প্রায় ৪০ হাজার প্রফেশনাল এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তবে এখাতে আরও একাউন্টিং প্রফেশনালের প্রয়োজন রয়েছে।