আড়ালের চেষ্টা নয়, অপরাধ হলেই মামলা: ডিএমপি

অপরাধমূলক কোনো ঘটনা আড়াল না করে আমলে নেওয়া, আমলযোগ্য যেকোনো অপরাধ সংঘঠিত হলেই মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। পাশাপাশি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত ডিএমপির পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন তিনি। সভায় অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সূত্রে এতথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সভায় মার্চ মাসের অপরাধ কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন মার্চ মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি যেমন- ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, সিঁধেল চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন ও পর্যালোচনা করা হয়। এসময় ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে। কোনো ঘটনা আড়াল করা যাবে না। মামলার রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন কমিশনার।

সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, অপরাধ যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক পুলিশি কার্যক্রম বাড়াতে বলা হয়েছে। ঢাকায় অনেকাংশে ছিনতাই কমে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেন তিনি। তবে আবার যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অংশ নেওয়া তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তি ও ওয়ারেন্ট তামিল বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথায় ছিনতাই, খুনের মতো ঘটনা বেশি ঘটছে সেসব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, আসামি গ্রেপ্তারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা ফোর্স লাইনে থাকেন তাদের ডিসিপ্লিন দেখভাল করা, আবাসন সমস্যার সমাধান, পিটি-প্যারেড নিয়মিত করা ও ট্রেনিংয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ বিনয়ী থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন ও কোনো অবস্থাতেই দৃষ্টিকটু ও অপেশাদার আচরণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মামলা তদন্ত করবে থানার ওসিরাও

বৈঠকে অংশ নেওয়া বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল সারোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএমপির প্রতিটি থানার ওসিকে মামলা তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। থানা এলাকার প্রতিটি ভবনের সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে থানার টহল টিমের সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কোনো অপরাধের তথ্য তাদের কাছে থাকলে তারা যেন পুলিশকে সেই তথ্য দেন সেভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, থানার এসআই-রা তো তদন্ত করেই। ইন্সপেক্টর তদন্ত ও ইন্সপেক্টর অপারেশনস তো মামলা তদন্ত করে থাকে। ওসিও তদন্ত করে। সেটা নিয়মিত করতে বলা হয়েছে।

আউট অব বক্স ট্রাফিকে ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যদেরও কাজ করতে হবে

অপরাধ সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ডিএমপির পুলিশ সদস্যদেরকে আউট অব বক্স কাজ করতে হবে। ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

এব্যাপারে বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা নিয়ে নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে থানা পুলিশ ট্রাফিক বিভাগকে অবশ্যই সহযোগিতা করবে।

বাড়াতে হবে ব্লক রেইড

উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জনগণের চাওয়া পাওয়াকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে পুলিশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাদক উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিল আরো বাড়াতে হবে। চিহ্নিত অপরাধী গ্রেপ্তারে ব্লক রেইড নিয়মিত করতে হবে।

সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির সব থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।