সমাজে বসবাসের জন্য নেতা বা গোত্র প্রধানের প্রয়োজন হয়। নেতা ছাড়া সুশৃঙ্খলভাবে সমাজে বসবাস করা সম্ভব নয়। যিনি সমাজ, দেশ বা কোনো গোষ্ঠীর প্রধান হবেন তার মাঝে নেতৃত্ব এবং বিশেষ কিছু গুণ থাকতে হবে। অর্থাৎ, পুরো সমাজকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার যোগ্যতা থাকতে হবে তার মাঝে।
একজন নেতাকে বুঝেশুনে সব দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্বে কোনো অবহেলা হলে পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদীহিতা করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত—
রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)
একজন যোগ্য নেতার মাঝে যেসব গুণ থাকা জরুরি এখানে তুলে ধরা হলো—
চরিত্রবান হতে হবে
জনপ্রতিনিধি বা নেতার চরিত্রবান হওয়া জরুরি। কারণ, তার মাধ্যমে মানুষ প্রভাবিত হয়। তার রুচি ও অভ্যাসের প্রভাব তার এলাকার আইন-শৃঙ্খলায় লক্ষ্য করা যায়। তাই জনগণের উচিত, জনপ্রতিনিধি হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া।
সৎ ব্যক্তির গুণ নিয়ে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, নবী সা. অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
আরও পড়ুন
সফল হতে চাইলে যেসব গুণ থাকতে হবে
মুয়াজ্জিনের মধ্যে যেসব গুণ থাকতে হবে
মেয়েদের যেসব গুণ দেখে বিয়ে করতে বলেছেন মহানবী
মুত্তাকি ও সত্যবাদী হতে হবে
জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার সবচেয়ে আবশ্যকীয় যোগ্যতা হলো মুত্তাকি হওয়া, সত্যবাদী হওয়া। কারণ যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, যে সত্যবাদী নয়, সে কখনো কারো কল্যাণে কাজ করবে না; বরং লোভ-লালসার মোহে পড়ে সামান্য স্বার্থে জনগণের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে।
জনদরদি হওয়া
যে সব সময় জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে, জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকবে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবে না- এমন লোককেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত।
রাসূল সা. বলেছেন, এমন আমির যার ওপর মুসলিমদের শাসনক্ষমতা অর্পিত হয়, অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ তাকে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬২৫)
স্বেচ্ছাচারী না হওয়া
এই গুণ জনপ্রতিনিধিকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে সাহায্য করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, আমি তোমাদের আমার ইচ্ছামতো কোনো জিনিস দিই না এবং আমার ইচ্ছামতো তোমাদের তা থেকে বঞ্চিত করি না। আমি তো শুধু কোষাধ্যক্ষ বা বণ্টনকারী। আমাকে যেখানে ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয় সেখানেই ব্যয় করি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৪৯)
সুবিচার করার যোগ্যতা রাখা
সাধারণত জনপ্রতিনিধিকে মানুষের অনেক সমস্যা সমাধান করতে হয়, বিরোধ মীমাংসা করতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে বিচারও করতে হয়। তাই একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধি হতে হলে অবশ্যই সত্যকে অনুধাবন ও সুবিচার করার যোগ্যতা থাকতে হবে।
বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী সা. বলেছেন, বিচারকরা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। দুই প্রকারের বিচারক হচ্ছে জাহান্নামি এবং এক প্রকারের বিচারক হচ্ছে জান্নাতি। জেনেশুনে যে লোক (বিচারক) অন্যায় রায় প্রদান করে সে হচ্ছে জাহান্নামি। সত্যকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি না করেই যে লোক (বিচারক) মানুষের অধিকারসমূহ নস্যাৎ করে সে লোকও জাহান্নামি। আর যে লোক ন্যায়সংগতভাবে ফায়সালা প্রদান করে (বিচারক) সে জান্নাতের অধিবাসী। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩২২)
প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া
ব্যক্তিগত কারণে প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ, যা প্রিয় নবী সা.-এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসূল সা. কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন। ( বুখারি, হাদিস : ৬১২৬)