সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ

#পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী

নিজস্ব প্রতিবেদক: অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ- আটাবের সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিষয়ের অভিযোগ তুলে সংগঠনটির কার্য নির্বাহী সদস্যপদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন নড়িয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’র স্বত্বাধিকারী সবুজ মুন্সী।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সবুজ মুন্সী নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিজ প্রতিষ্ঠান নড়িয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’র প্যাডে পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, আটাব কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম উল্লেখপূর্বক সাধারণ সদস্যদের কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিব্রতবোধ করছেন তিনি।

এর আগে আটাব সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিষয়ের অভিযোগ তুলে ধরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা’র মহাপরিচালক, আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কর কমিশনার, দুদক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল’র মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আটাব সদস্যদের বিদেশে ফেম ট্রিপের নামে বিভিন্ন সময়ে সায়মন ওভারসীজ ও সায়মন হলিডেজ’র মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করে আসছেন সংগঠনটির সভাপতি ও মহাসচিব। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষতিক ব্যবস্থা নেয়ারও জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে-
২০১৭- ২০১৯ মেয়াদে ৬ষ্ঠ ও ৭ম কার্যকরী সভায় আটাব অনলাইন গঠনের নিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২এপ্রিল আটাব সদস্যদের নিয়ে জরুরি সাধারণ সভায় এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ, আটাবের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান আটাব অনলাইন লিঃ গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। যা আটাব সংঘ স্মারক ও আটাব সদস্যদের স্বার্থের পরিপন্থি।
তথ্য বলছে, আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এয়ার স্পীড প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ভিন্ন ভিন্ন চেক ইস্যু করে মোট ৯৭ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং মহা সচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত সালেহ এর মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের নামে মোট ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১১৭ টাকার চেক ইস্যু করে আত্মসাৎ করে। এছাড়াও বিভিন্ন জাল ইনভয়েস এর মাধ্যমে আটাবের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচন ও আটাব মেলাসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে যার স্বপক্ষে কোন বিল বা ইনভয়েস জমা দেওয়া হয়নি।
বিগত ২০১৮ সাল থেকে আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ এমিরেটস হলিডেজের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা ফি ও প্যাকেজের টাকা সংগ্রহ করে অবৈধভাবে আরব আমিরাতে পাচার করছে। এছাড়াও বিভিন্ন অফিসে টাকা তারা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে থাকে।
আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফের প্রতিষ্ঠান মডার্ণ ওভারসীজের বিরুদ্ধে কুয়েতের ভিসা প্রসেসিং এ ৩০-৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। যা চলতি বছরের ১ মার্চ পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রায় ২,৯০০ রিক্রুটিং এজেন্সী থাকলেও মাত্র ৬টি এজেন্সী কুয়েত এ্যাম্বেসীতে ভিসার কাজ করতে পারে। এ সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছেন আটাব সভাপতি জনাব আব্দুস সালাম আরেফ। পত্রিকার প্রতিবেদনের কপি সংযুক্ত করা হলো।
তথ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আটাব মহা সচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা মুহায়মিন সালেহ্ এর কন্যা। সালেহ্ আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে একাধিকাবার আটাবের সভাপতি হয়েছিলেন। জি.ডি.এস (এ্যামাডিউস) এর শেয়ার, বিভিন্ন এয়ার লাইন্সের জি.এস.এ এবং সায়মন সেন্টার সহ শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আফসিয়া জান্নাত সালেহ্ ও পিতার পদাংক অনুসরণ করে আওয়ামীলীগ নেত্রী পরিচয়ে আটাব নেতৃত্বে আসেন এবং নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে অবৈধ কমিটির সকলকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আটাব সদস্যদের আস্থার অবমাননা করে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া যায় না বিধায় আপনার দপ্তরকে গড়হবু খধঁহফবৎরহম চৎবাবহঃরড়হ অঈঞ (গখচঅ) ২০১২ (সংশোধিত-২০১৫) এর ধারা ৪ (১) ও ৪ (২) ও দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৪০৭ ও ৪০৯ অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষতিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

এর আগে আটাব এর সভাপতি ও মহাসচিবকে শোকজ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাহসিনা বেগম সই করা এক নোটিশে এ আদেশ দেয়া হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস্ অব বাংলাদেশ (আটাব) এর পরিচালনা পর্ষদ বাতিলপূর্বক প্রশাসক নিয়োগের আবেদন পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, আটাব এ বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ এর ১৭ ধারা মোতাবেক কেন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না, পত্র প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।