নামাজে যথাযথ বিনয় ও একাগ্রতা না থাকলে, একাগ্র মনে আল্লাহমুখী হয়ে নামাজ না পড়লে নামাজের সওয়াব পুরোপুরি পাওয়া যায় না। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এমন অনেক লোক আছে যারা নামাজ পড়ে কিন্তু তাদের নামাজ পুরাপুরি কবুল না হওয়ায় পূর্ণ সওয়াব তারা পায় না। তাদের কেউ দশ ভাগের এক ভাগ, কেউ নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ বা দুই ভাগের এক ভাগ সওয়াব পেয়ে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ)
সুতরাং নামাজ যে কোনোভাবে আদায় করে ফেললেই হয়ে যায় না। যথাযথ মনোযোগ ও প্রাণ না থাকলে হতে পারে ওই নামাজের এক দশমাংশ সওয়াবও আপনি পাচ্ছেন না।
নামাজে অমনোযোগিতার একটি আলামত হলো এদিক-ওদিক তাকানো। হাদিসে এসেছে, নামাজে এদিক-ওদিক তাকালে নামাজের সওয়াব কমে যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা এক ধরণের ছিনতাই। এভাবে শয়তান বান্দার নামাজের অংশবিশেষ কেড়ে নেয়। (সহিহ বোখারি) অর্থাৎ নামাজের কিছু অংশের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যায়।
আবার নামাজে চোখ বন্ধ রাখাও সুন্নতের খেলাফ। বড় কোনো অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা না থাকলে চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া মাকরূহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায়, সে যেন তার দুই চোখ বন্ধ করে না রাখে। (মু’জামে তাবরানি)
তাই নামাজে চোখ খোলা রাখতে হবে, একইসাথে এদিক-ওদিক তাকানো থেকেও বিরত থাকতে হবে। নামাজে দৃষ্টি কখন কোথায় রাখতে হবে এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায় রাখতে হবে, রুকু অবস্থায় রাখতে হবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় রাখতে হবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় রাখতে হবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত)
এটিই হলো যথাযথ ও সুন্নত পদ্ধতি। এভাবে দৃষ্টি নত রেখে নামাজ আদায় করলেই নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা যায়। চোখ বন্ধ রাখার প্রয়োজন পড়ে না।
তবে যদি কেউ এমন জায়গায় এমন পরিস্থিতিতে নামাজ পড়তে বাধ্য হয়, যেখানে চারপাশে বা সামনে এমন কিছু আছে বা ঘটছে যে চোখ খোলা রাখলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন, তাহলে চোখ বন্ধ রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত চোখ বন্ধ রেখে নামাজ পড়া এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না।
নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা। তিনি যেভাবে নামাজ পড়েছেন, বা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে নামাজ পড়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা নামাজ আদায় করো যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখছো। (সহিহ বুখারি)