স্থগিত হলো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এছাড়া এখন দাতা সংস্থাগুলো হাত খুলে সহায়তা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড যেমন বলেছে তোমরা যেকোনো প্রকল্প নিয়ে আসো আমরা সহায়তা দেব। এরকম অনেক দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংস্থা সহযোগিতা দিতে চাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। পরে রাজনৈতিক সরকার দায়িত্বে এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমরা নিজস্ব ও বৈদেশিক সম্পদ হিসাব করেই উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে পারব।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রীতি অনুযায়ী সবসময় একনেক সভা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বিগত সময়ে একনেক সভায় বিপুল সংখ্যক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকতো না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকতো। বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প যাচাই বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। তবে চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে আছে সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। ফলে একনেকে গুরুত্বও কমবে। পাস হওয়া মানেই কাজ শেষ নয়, বাস্তবায়ন বড় কথা। বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প খুব বেশি যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে পড়বে না। আগে পাস করা হবে, এরপর কোনো সমস্যা থাকলে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে যোজন বিয়োজন করা যাবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। মৃতপ্রায় ও হিমাগারে থাকা প্রকল্পগুলো আমরা যদি ছেড়ে দিই, তাহলে বিশ্বব্যাংক ডিসেম্বরের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা ছাড় করতে পারবে। যেসব প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়ন আছে, সেগুলোতে সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে, ফলে অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের জন্য গ্যাসকূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বোধগম্য না। যেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো দেওয়া হয়েছিল বিদেশি কোম্পানিকে। এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে হবে। শিক্ষা প্রযুক্তিতে আরও প্রকল্প নিতে হবে। মানবসম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা। অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বড় প্রকল্পগুলোতে সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলো সেগুলো যাচাই করা হবে। বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায়।