কুশিয়ারার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সড়ক ও সেতু। এ ভাঙনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখলে বিপাকে পরে মানুষ। তীব্র গরমে দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
স্থানীয়রা জানায়, গত বুধবার (৭ মে) ভয়াবহ এ ভাঙন দেখা দেয় উপজেলার দীর্ঘতম সড়কগুলোর অন্যতম খসরুপুর জিসি-বালাগঞ্জ সড়কের ফাজিলপুর এলাকায়। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই অঞ্চলের মানুষের। বিশেষ করে পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এতে ভোগান্তিতে পরেন।
এই অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জরুরি-ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে।
কুশিয়ারা নদীতে স্রোত বাড়ছে। স্রোতের টানে খসরুপুর জিসি-বালাগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙতে শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকদিন আগে ওই সেতু এলাকায় ফাটল দেখা দেয়। নির্মিত সেতুও রক্ষা করা যায়নি। প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক দিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর পর্যন্ত যোগাযোগ সংযুক্ত রয়েছে। যা এখন চলাচলে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এলজিইডির সিলেটের উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মামুনুর রশীদ, উপজেলা প্রকৌশলী মুহিবুল্লাহ, স্থানীয় পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়দের দাবি, এই ভাঙন দেখা দিয়েছিল গত বছরের নভেম্বর মাসে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলার প্রস্তাব দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে তারা কেবল মাটি ও পলিব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করে। যা কোনো কাজেই আসেনি। শেষমেশ রাস্তা ও কালভার্ট কুশিয়ারার পেটে চলে যাচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ভাঙন রক্ষায় পাউবোকে বড় প্রকল্প হাতে নিতে হবে। না হয় মেরামতে কোনো কাজে আসবে না। একই ভাবে হামছাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও ভাঙন দেখা দিবে বলে আশঙ্কা তাদের।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলা, জেলা সদর এবং হাটবাজারে চলাচল করতে সড়কটি ব্যবহার করেন বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। ব্যবসায়ীরা এ পথে তাদের মালামাল পরিবহন করে থাকেন। সড়কটি ভেঙ্গে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। এ সড়কের কোনো বিকল্প পথ না থাকায় বিপাকে সবাই।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পূর্ব পৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন বলেন, পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বড় ধরনের এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মানুষের জন-জীবন স্থবির হয়ে গেছে। ফাজিলপুরসহ এই এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হলে আগে ভাগেই বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়ে ছিল।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের আশ্বস্ত করতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মামুনুর রশীদ বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ওসমানীনগরের শেরপুর পর্যন্ত দীর্ঘ এই সড়ক যোগাযোগ পুনর্স্থাপনের মাধ্যমে দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।