বাজেটে এসএমই খাতে ৫০০ কোটি টাকা চায় ফাউন্ডেশন

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে আরও কার্যকর ও প্রতিযোগিতামূলক করতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নীতিগত সহায়তা এবং ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির মতে, দেশের অর্থনীতিতে এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা সত্ত্বেও বরাবরই বাজেটে অবহেলিত রয়ে গেছে এসএমই খাত। উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সহায়তা ও বাজার সম্প্রসারণের মতো কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সারাদেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আসছে না।

ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, দেশের প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমই উদ্যোক্তার তুলনায় বর্তমান বাজেট ও কাঠামো অনেকটাই সীমিত। এসব উদ্যোক্তার প্রায় ৭০ শতাংশ ঢাকার বাইরে অবস্থান করলেও, সেখানে এসএমই ফাউন্ডেশনের কোনো কার্যালয় নেই, যা সেবা বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধক। তাই এসএমই নীতিমালা ২০২৫ বাস্তবায়ন এবং সারাদেশে উদ্যোক্তাদের সহায়তায় আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সহযোগিতায় আয়োজিত ‘এসএমই-বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২৬’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুসফিকুর রহমান এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও পরিচালক সামিম আহমেদ। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জানান, ২০০৭ সাল থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন জাতীয় শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালাসমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ক্লাস্টারভিত্তিক কার্যক্রম, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা সহায়তা এবং সহজ শর্তে অর্থায়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ উদ্যোক্তা এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হয়েছেন, যদিও দেশের প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ উদ্যোক্তার তুলনায় এই পরিসংখ্যান অনেক কম। এছাড়া দেশের ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঢাকার বাইরে অবস্থান করলেও, ফাউন্ডেশনের কোনো আঞ্চলিক কার্যালয় নেই।

এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক জানান, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ৩০০ প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ১৪০টি প্রস্তাব এনবিআর-এ জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এনবিআরের কাছে ৫৫৭টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে ফাউন্ডেশন, যার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাব আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশ, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, চীনে এই হার ৬০ শতাংশ, ভারতে ৩৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৫২ শতাংশ, আর পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ।

সভায় আগামী বাজেটে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানানো হয়, যা এসএমই নীতিমালা ২০২৫ বাস্তবায়ন ও উদ্যোক্তা সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।