মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে এনেছে। তার এই সফরকালে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত, গাজা সংকটের জটিলতা এবং বিপুল অঙ্কের অস্ত্রচুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
রিয়াদে একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, সিরিয়া যেন ‘আবার শ্রেষ্ঠত্বের পথে ফিরতে পারে’। সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারারের সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাতের কথাও জানান ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, তুরস্ক ও সৌদি আরবের সহায়তায় গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন।
রেকর্ড অস্ত্রচুক্তি ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ
রিয়াদে ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি সম্পন্ন করেন। যা মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্র চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি, সৌদি কোম্পানি ডেটাভল্ট যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানানো হয়। গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিও দুই দেশে যৌথ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
গাজা সংকট
ট্রাম্পের এই সফরে গাজা সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল। সৌদি আরব সফরে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর ‘স্বপ্ন’ হলো সৌদি আরবকে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যুক্ত করা—একটি ঐতিহাসিক চুক্তি, যা তাঁর আগের শাসনামলে ইসরায়েল ও কিছু উপসাগরীয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল।
তবে সৌদি যুবরাজ জানিয়ে দিয়েছেন, গাজা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং ফিলিস্তিনের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া তা সম্ভব নয়।
গাজা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘গাজার মানুষ ভালো ভবিষ্যৎ পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু হামাস তা ছিনিয়ে নিচ্ছে অপহরণ, নির্যাতন ও রাজনীতির নামে সহিংসতার মাধ্যমে।’
এদিকে, কাতার সফরের আগে ওয়াশিংটন হামাসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করে আনে। তবে, গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলার ঘোষণা এবং ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখানকার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়েছে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে কোনো অগ্রগতি হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কাতার সফর ও বিতর্কিত উড়োজাহাজ উপহার
বুধবার (১৪ মে) দুপুরে ট্রাম্প কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছাবেন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটির পাশাপাশি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করে আসছে। তবে কাতার সফরকে ঘিরে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে ট্রাম্পের একটি উপহার গ্রহণকে কেন্দ্র করে। কাতার থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বোয়িং উড়োজাহাজ উপহার হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি, যা ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টের সরকারি সফরেও ব্যবহৃত হতে পারে। পরে সেটি ব্যক্তিগত ব্যবহারে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এটি মার্কিন সংবিধান ও নিরাপত্তা নীতির দিক থেকে বড় উদ্বেগ তৈরি করেছে। সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিচার বিভাগের সব রাজনৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
শেষ গন্তব্য আবুধাবি
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ ধাপে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে যাবেন।
ট্রাম্পের এই সফর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।