২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন।
জাতীয় সংসদ না থাকায় বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্য পেশ করেন। যেখানে জানা গেছে, কোন খাতে সরকারের বাজেট কত। জানা গেছে, কোন পণ্যের দাম বাড়ছে আর কোনটির কমছে।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় জানান, বার্ষিক কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর অদ্যাবধি কোনো বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
২০২৫-২৬ অর্থ বছরে উন্নয়ন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন-বিদ্যুৎ খাতে। এই দুই খাতে ৯১ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমছে উন্নয়ন বাজেটে। প্রায় সব খাতেই বরাদ্দ কমছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত থেকে বেশি কমছে।
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
নতুন এডিপিতে উন্নয়ন বরাদ্দের দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। বিগত বছরগুলোতেও এই দুটি খাতকেই অগ্রাধিকার পেতে দেখা গেছে। এবার শিক্ষা খাতের অবস্থান তিন নম্বরে। চার নম্বরে আছে গৃহায়ন। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান পঞ্চম।
এছাড়া শিক্ষা খাতে ৯১টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। শতকরা হারে এডিপির বরাদ্দ কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতের ৩৫টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমেছে সোয়া ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই স্কুলকলেজ, হাসপাতালের ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্প বা কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের গুণগত মান উন্নয়নে বরাদ্দ কম থাকে।
আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ১৪২।
প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দের ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে পাঁচটি খাতে। এগুলো হলো পরিবহন ও যোগাযোগ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; শিক্ষা; গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি; স্বাস্থ্য। এই পাঁচটি খাতে বরাদ্দ কমছে ৮ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
আরও পড়ুনঃ বাড়তে পারে এসি-ফ্রিজের দাম
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। গৃহায়ন খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে শিক্ষার দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্যের তিন গুণের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।