অবশেষে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন হচ্ছে। কর্মচারী সংগঠনগুলো অধ্যাদেশ বাতিলের আন্দোলন করলেও এখন তারা সংশোধনে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতারা ১৯৭৯ সালে সরকারি চাকরির (বিশেষ বিধান) যেসব ধারা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫ এ ঢুকেছে- তা বাদ দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশে অনানুগত্যের যে ধারা নতুন করে যুক্ত হয়েছে- তা বাদ দিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। চাকরি থেকে অপসারণের যে ধারা অধ্যাদেশে ঢুকেছে তা-ও বাদ দেওয়ার বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে। তবে বাধ্যতামূলক অবসরের ধারা যুক্ত হয়েছে।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় আইন উদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে গঠন করা উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতাদের মধ্যে গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ সচিবালয়ে চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে টানা ৫ দিনের বিক্ষোভ
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৫ মে জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের ৩৭ দফা (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যা অনানুগত্যের শামিল, যা অন্য কোনো কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে, শৃঙ্খলা বিঘ্ন করে এবং কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, তাহলে ইহা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধারার বিষয়ে গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটি এবং কর্মচারী নেতাদের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ধারাটি বাতিল হবে। ‘তদস্থলে যদি কোনো কর্মচারী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করে, আইনসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশনা অমান্য করেন, সরকারি আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করেন এবং এসব কাজে সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করে’- এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, গত ২৫ মে জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের ৩৭ (খ) উপধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনো কর্মচারী অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ব্যতিত বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, তাহলে ইহা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধারাটির বিষয়ে গত ২৫ জুন উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতাদের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে ধারাটি বাতিল করে তদস্থলে- দফা (ক) এ উল্লিখিত কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে ছুটি বা যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়া অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের ৩৭ দফা(গ)-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো কর্মচারী অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাহার কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকিতে বা বিরত থাকিতে বা তাহার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন, তাহলে ইহা একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধারার বিষয়ে গত ২৫ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে ধারাটি বাতিল করা হবে। তদস্থলে যেকোনো কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন শব্দগুলো প্রতিস্থাপন হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উল্লিখিত অপরাধগুলোর যেকোনো একটি যদি কোনো কর্মচারী করেন, তাহলে ২৫ মে জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশে তিন ধরনের শাস্তির বিধান উল্লেখ রয়েছে। যেমন- নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। শাস্তির বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি এবং কর্মচারী নেতাদের বৈঠকে আগের একটি শাস্তি বাতিল করে নতুন একটি শাস্তি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ চাকরি থেকে অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসরের ধারাটি যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ২৫ জুন জারি করা অধ্যাদেশে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল না। তদন্তের ব্যবস্থা ছিল না। উপদেষ্টা কমিটি ও কর্মচারী নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো কর্মচারী উল্লিখিত অপরাধ করলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তিন দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত কর্মচারী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। উল্লিখিত অপরাধ যদি কোনো কর্মজীবী নারী করে বসেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করবে। কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্য থাকবেন। ফলে নারী কর্মজীবীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগ গঠন, ১৪ দিনের মধ্যে শুনানি সম্পন্ন হবে। অধ্যাদেশে ৭ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করার বিধান রয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলের সুযোগ আগের মতো বহাল থাকবে। তবে আরোপিত দণ্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা যাবে। উচ্চ আদালতে আপিল রাষ্ট্রপতির রায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং যে কর্তৃপক্ষ শাস্তি দিয়েছে ওই কর্তৃপক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ থাকবে। রাষ্ট্রপতির কাছে যা করা হবে- তা হচ্ছে মূলত শাস্তি মওকুফের আবেদন করা।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ