প্রথমবারের মতো কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশি আম উৎসব ২০২৫’। বাংলাদেশি দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত এই ব্যতিক্রমধর্মী মেলা শুরু হয়েছে ২৫ জুন, চলবে আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত। সাত দিনব্যাপী এই আয়োজনে বাংলাদেশি আমের স্বাদ নিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন হাজারো প্রবাসী, কাতারের স্থানীয় বাসিন্দা, ভারত, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের ফলপ্রেমীরা।
আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশি আম বিক্রি নয়, বরং বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং এবং দেশের রসালো আমকে কাতারের ব্যবসায়িক মহলে পরিচিত করে তোলা। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর দোহায়, তা-ও অত্যন্ত পপুলার লোকেশনে সাত দিনব্যাপী এ ধরনের একটি মেলা আয়োজন করাই একটি বড় সাফল্য বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব আব্দুল্লাহ আল রাজী বলেন, “এই আয়োজন আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। সাধারণত এই ধরনের ফল উৎসব কাতারে ভারত ও পাকিস্তান করে থাকে। আমরা এবার প্রথম এমন আয়োজন করলাম। ফল মার্কেটের বড় একটি অংশ প্রতিবেশী দেশের দখলে থাকলেও, বাংলাদেশি আমের ব্যাপক সুনাম থাকা সত্ত্বেও কাতারে প্রবেশ করতে পারিনি। এবার আমরা সেই জায়গায় ‘এন্ট্রি’ নিতে পেরেছি, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।”
তিনি আরও জানান, “উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মেলায় আসছেন। কাতারের প্রায় সব শীর্ষ গণমাধ্যমেই এই মেলার খবর প্রচার হয়েছে। কাতারের সুপারশপগুলোতে বাংলাদেশি আম পৌঁছে দিতে দূতাবাস থেকে ব্যবসায়িক সংযোগ তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।”
বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (BFVAPEA) সাধারণ সম্পাদক মো. মনসূর সিআইপি বলেন, “আমরা এখানে বিক্রির উদ্দেশ্যে আসিনি। আমরা কাতারের ব্যবসায়িক কমিউনিটিকে দেখাতে চেয়েছি—বাংলাদেশেও বিশ্বমানের সুস্বাদু আম উৎপন্ন হয়। এমনকি আমরা কল্পনাও করিনি, এতটা চাহিদা থাকবে। তিন দিনেই অধিকাংশ আম বিক্রি হয়ে গেছে। ১২০ টন টার্গেট থাকলেও আমরা শঙ্কিত, ফ্লাইটে নতুন আম না এলে স্টলগুলো শূন্য হয়ে যেতে পারে।”
তিনি জানান, মেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, রূপালি, হাড়িভাঙ্গা, ব্যানানা ম্যাংগো, বারি ফোর সহ ৭–৮ ধরনের আম রয়েছে। সঙ্গে এসেছে লিচু, কাঁঠাল ও লটকনও। আমের দাম রাখা হয়েছে প্রতীকী—প্রতি কেজি ১৫ দিরহাম মাত্র।
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার গ্রুপের ম্যানেজার সৈয়দ আসিফ উদ্দিন জানান, “প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার কেজি আম বিক্রি হচ্ছে, যার ৬০–৭০% গ্রাহক বিদেশি। তারা বাংলাদেশের আম খেয়ে বিস্মিত ও সন্তুষ্ট। আমরা গর্বিত, নিজ দেশের পণ্যে এমন আন্তর্জাতিক সাড়া পেয়ে।”
এবারের আয়োজনে ২০টি কোম্পানির ৪৫টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলে। আয়োজকদের আশা, সরকার এবং প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোর সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি আম বিশ্বজুড়ে নতুন বাজার তৈরি করবে।