২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এই দুই বছরেরও কম সময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
গাজার ওপর গণহত্যামূলক হামলার আড়ালে পশ্চিম তীরের শহর-গ্রামগুলোতে রাতের পর রাত অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। সেইসঙ্গে, অবৈধ ইসরায়েলি বসতির সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে।
সর্বশেষ নিহত ব্যক্তি হলেন সামের বাসাম আল-জাগারনেহ, যিনি ১ জুলাই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে মারা যান।
কারা করছে হামলা?
ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতির সন্ত্রাসীরা এসব হামলা করছে। তারা হঠাৎ করে গ্রাম-শহরে ঢুকে আগুন দিচ্ছে, মানুষকে আক্রমণ করছে, বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। একই সময়ে, সেনাবাহিনী শরণার্থী শিবির ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে, মানুষকে ঘরছাড়া করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে গাজার যুদ্ধে বিপুল সেনা মোতায়েনের কারণে পশ্চিম তীরে বসতি সন্ত্রাসীদের আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে “ইসরায়েলি বাহিনীর অংশ” বানানো হয়েছে, যা সন্ত্রাসীদের হামলা আরও বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুনঃ গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল
ইসরায়েল কেন করছে এই হামলা?
মানবাধিকার সংগঠন এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে জমি দখল করতেই তারা এসব হামলা করছে।
“পিস নাও” এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২০ বছরের তুলনায় বেশি ফিলিস্তিনি জমি দখল করেছে ইসরায়েল। এর নেতৃত্বে রয়েছেন চরম-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ, যিনি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে “সেটেলমেন্ট প্রশাসন” নিয়ন্ত্রণে নেন।
এই প্রশাসনের মাধ্যমে ইসরায়েলি আইন পশ্চিম তীরে কার্যকর করার চেষ্টা চলছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
সহিংসতা কি বাড়ছে?
প্রতিদিন সহিংসতা বাড়ছে। ২০২৫ সালের প্রথম মাসেই ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শেষ দুই মাসে নিহত ৩৪ জন।
শরণার্থী শিবিরে “সশস্ত্র দল ধ্বংস” করার অজুহাতে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল, কিন্তু সাধারণ মানুষকেও হত্যা করা হচ্ছে, দাফন করতে দিচ্ছে না, পুরো পাড়া গুঁড়িয়ে বাস্তুচ্যুত করছে।
কোথায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল?
জেনিন, তুলকারেম, নূর শামস, ফারা, নাবলুসের শরণার্থী শিবিরে অভিযান চলছে।
“ফরেনসিক আর্কিটেকচার” বলছে, গাজায় ব্যবহৃত কৌশলেই শিবিরগুলো অবরুদ্ধ করে মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। হাসপাতালও হামলার শিকার হচ্ছে।
বসতি সন্ত্রাসীদের হামলা কীভাবে হচ্ছে?
টেক ফর প্যালেস্টাইন-এর তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৮০০ হামলা চালিয়েছে বসতি সন্ত্রাসীরা। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই হামলার সংখ্যা ৪১৪-এর বেশি।
সবচেয়ে বেশি হামলা হচ্ছে এরিয়া সি-তে, যা পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত এবং পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
শেষ হতে পারে সহিংসতা?
সহিংসতা শেষ হওয়ার কোনো আলামত নেই। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েল হেবরনের মাসাফার ইয়াত্তার ১২টি ফিলিস্তিনি গ্রাম উচ্ছেদের চেষ্টা করছে, “সেনা প্রশিক্ষণ এলাকা” ঘোষণা করে বাস্তুচ্যুতি বৈধ করার চেষ্টা করছে।
২৫ জুন কফর মালিক গ্রামে ১০০ ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বসতি সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। পাশের তাইবেহ গ্রামে একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, প্রতিরোধ করলে ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা হামলা আরও ভয়াবহ হবে বলে তারা আতঙ্কে আছেন।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।