বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা পোশাকশিল্পে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তান পাট তন্তু আমদানি করলে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক : বিজিএমইএ সভাপতি
এ সময় বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলে ছিলেন সহ-সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী ও সদস্য মোঃ কামাল উদ্দিন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ড. মোস্তফা আবিদ খান, এসএসজিপি, কম্পোনেন্ট ম্যানেজার-১; ড. মো: রেজাউল বাসার সিদ্দিকী, কম্পোনেন্ট ম্যানেজার-২ এসএসজিপি; নেছার আহমদ, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপার্ট, এসএসজিপি; আবুল কালাম আজাদ, যুগ্মসচিব এবং মেহেদী মোশাররাফ ভুইয়া, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট।
সাক্ষাৎকালে বিজিএমইএ নেতারা তৈরি পোশাকশিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্যাবলী, এনবিআর সংক্রান্ত বিষয়, শিল্পে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য করণীয়, চট্রগ্রাম বন্দরের দক্ষতা উন্নয়ন, ট্রেড লাইসেন্সসহ ইআরসি, আইআরসি এবং অন্যান্য লাইসেন্স নবায়নে জটিলতা দূরীকরণ ও অন্তত পাঁচ বছর মেয়াদি করা, রাজউক কর্তৃক ড্যাপের আওতায় এর আগে নির্মিত কারখানাগুলোর হয়রানি শিকার হওয়া এবং আরও নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৯ মাস থেকে কমিয়ে ৩ মাস করা হয়েছে। অনেক সময়ে আর্থিক কারণে উদ্যোক্তা এই সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না।
ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাসে উন্নীত করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, এটি করা হলে ৫০০-৬০০ পোশাক কারখানা ক্লাসিফায়েড ঋণ থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ এবং বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
নগদ সহায়তা হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা পোশাকশিল্পের জন্য সহায়ক ও সময়োপযোগী নয় বলে মত প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। শিল্প ও দেশের স্বার্থে নগদ সহায়তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা পোশাক শিল্পে ১ শতাংশ হারে কর্তনকৃত উৎসে করকে বছর শেষে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করেন।
আলোচনায় তারা বলেন, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্ক্রিমটি বর্তমানে বন্ধ আছে। তারা এই স্কিমটি আবার চালু করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এটি উদ্যোক্তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যোগানে সহায়তা করবে।
তারা উদ্যোক্তাদের সহায়তায় রপ্তানির বিপরীতে একটি ফোর্সড তহবিল গঠনেরও প্রস্তাবনা দেন, যেখান থেকে সংকটের সময়ে সংশ্লিষ্ট কারখানা শ্রমিকদের বেতন প্রদান ও অন্যান সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, পোশাকশিল্পের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে কাস্টমস সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলোর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোতেও অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হয়।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে লিড টাইম কমিয়ে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়াগুলোকে সহজীকরণ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত করা অপরিহার্য। সিদ্ধান্ত হয় যে, এনবিআরের দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব করার জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দেয়া হবে।
চট্রগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বিজিএমইএ নেতারা অনুরোধ জানান।
বৈঠকে বলা হয় যে তীব্র গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলোতে। বিজিএমইএ সভাপতি গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ভোলায় আবিষ্কৃত বিপুল মজুদের নতুন গ্যাস কূপগুলো থেকে অবিলম্বে গ্যাস উত্তোলন করে তা জাতীয় গ্রিডে নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শিল্পে গ্যাসের চাহিদা পূরণে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।
বৈঠকে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল বলেন যে পোশাকশিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার অপরিহার্য। তারা প্রস্তাবনা দিয়ে বলেন, পিপিপি ভিত্তিতে সরকারের খাস জমি এবং খাল-বিলগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে স্থাপন করা হলে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে।
বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেন, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় পোশাক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সরকার জমি বরাদ্দ দিলে পোশাক উদ্যোক্তারা ঐসব জমিতে শ্রমিকদের জন্য পর্যায়ক্রমে হাসপাতাল, আবাসন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।
বিজিএমইএ নেতারা মুন্সিগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলোর জন্য একটি সমন্বিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে জমি বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সহযোগিতা কামনা করেন।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের বক্তব্যগুলো নোট করে বলেন, সরকার পোশাকশিল্প সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত আছে এবং এ শিল্পকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা প্রদান করে যাবে। :