মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত ওয়ালমার্টের কয়েকটি পোশাক অর্ডার স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের তিনজন কারখানা মালিক এবং ওয়ালমার্টের এক সরবরাহকারীর পাঠানো ই-মেইলের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এবং এ খাত থেকেই দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ ও জিডিপির ১০ শতাংশ আসে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, যদি ১ আগস্ট থেকে প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকর হয়, তবে তারা এত উচ্চ হারে শুল্ক বহন করতে পারবেন না এবং অর্ডার কমে যাবে।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপে পোশাক রপ্তানির চার ভাগের একভাগ বাংলাদেশের
এ অবস্থায় ওয়ালমার্টের জন্য নির্ধারিত প্রায় ১০ লাখ সাঁতারের প্যান্টের অর্ডার স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, অর্ডারটি বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার ফারুক সৈকত প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ইকবাল হোসেনসহ অন্যদের কাছে ইমেইল লিখে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করায় বসন্ত মৌসুমের সব ক্রয়াদেশ স্থগিত করছি।
তিনি আরও বলেন, যদি শুল্কসংক্রান্ত বিষয়টি মীমাংসা হয়, তাহলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা উৎপাদন আবার শুরু করব।
ফারুক সৈকত রয়টার্সকে বলেন, অর্ডার স্থগিতের সিদ্ধান্ত ওয়ালমার্ট নয়, বরং ক্ল্যাসিক ফ্যাশন নিজেই নিয়েছে।
ওয়ালমার্টের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওয়াশিংটনে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার জিন্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশের জন্য যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে, তাহলে টিকে থাকা খুব কঠিন হবে। সত্যি বলতে কি, তখন এখনকার মতো অর্ডার আর আসবে না।
তিনি আরও বলেন, গ্রাহককে কিছু শুল্ক বহনের অনুরোধ করা হবে, সে অবস্থাও নেই। কারণ, ইতিমধ্যে তারা আগের শুল্ক ভারের কিছুটা বহন করছেন।
রুবেল বলেন, বড় বড় কোম্পানিই কিছুটা টিকে থাকতে পারবে, কিন্তু ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর পক্ষে তা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩.৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে ঢাকাভিত্তিক আরেক পোশাক কারখানার মালিক বলেন, ওয়ালমার্টের জন্য আমি ২০২৬ সালের বসন্তকালীন ট্রাউজারের একটি অর্ডার নিয়ে এক আমদানিকারকের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। তবে শুল্ক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে আমদানিকারক আমাকে বলেছেন, অর্ডার নিশ্চিত করতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়, তাহলে আমি ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি অর্ডার পাওয়ার চেষ্টা করব, প্রয়োজনে চাহিদা বাড়াতে দাম কমিয়ে হলেও।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।