সাভারের আশুলিয়ায় বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্পাঞ্চলের টঙ্গাবাড়ী, জিরাবো, নরসিংহপুর ও জামগড়া এলাকার অনন্ত ৩০ কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকার মন্ডল নেটওয়ার্ক লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে হাজিরা বোনাস, নাইট বিল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে আসছিল। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি শনিবার মেনে নেওয়া হবে বলে জানায়।
কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা শনিবার কারখানায় এসে অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেখতে পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। একইভাবে আজ রবিবার সকালেও মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে ফিরে গেছেন।
মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানার সিকিউরিটি সুপারভাইজার রুহুল আমিন বলেন, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে বন্ধের নোটিশ দেখে চলে যায়। এর আগে শ্রমিকরা বেশকিছু দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছিল।
মালিকপক্ষ কিছু দাবি মেনে নিয়েছে। এরপরও শ্রমিকরা অযৌক্তিক কিছু দাবি উত্থাপন করলে বাধ্য হয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কারখানা অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে। এর মাঝে ভবন মালিক রাজীব ও তার ভাই সজিব শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে হুমকিধানকি দিয়ে আসছেন।
মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শ্রমিকদেরকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি মারধরও করেছেন। আন্দোলন করায় আয়েশা আক্তার ও রুবেল নামে দুই শ্রমিককে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ তুলে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শ্রমিকরা।
এদিকে মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী ম্যাংগোটেক্স কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে নিরাপত্তার স্বার্থে সাড়ে ১০ টার দিকে ম্যাঙ্গো টেক্স কারখানার শ্রমিকদের ছেড়ে দেয় কতৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ম্যাঙ্গো টেক্স কারখানার একজন শ্রমিক জানায়, আমাদের মালিকপক্ষ সকল দাবি মেনে নিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় কাজ করতে চাই।
কিন্তু কিছু কিছু কারখানায় এখনো সমস্যা সমাধান না হওয়ায় আমাদেরও কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
প্রোডাকশনে কাজ করা একজন শ্রমিক জানায়, শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় কাজ হলে প্রতি মাসে আমি ২০ হাজার টাকার ওপর বেতন পাই। কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনের কারণে এ মাসে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারি নাই। এ মাসে আমি মাত্র সাত হাজার টাকা বেতন পাব। এই টাকা দিয়ে আমি বাসা ভাড়া দিব নাকি দোকানের বাকি পরিশোধ করব, কিভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো সাউদার্ন, ম্যাঙ্গো টেক্স, মাসকট, গ্রীন লাইফ, গ্লোরিয়াস, রাতুল, অরুনিমা, রেডিয়েন্স, ব্যাক নিট, তাহারাত ফ্যাশনসহ অন্তত ৩০টি। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ ১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, কয়েকটি জায়গায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এ ঘটনায় বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের উভয় পাশের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপরাধ ও অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শিল্প পুলিশ, এপিবিএনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।