একনেক বৈঠক বরাদ্দে সংশয়, বাদ পড়লো জুলাই ফ্ল্যাট প্রকল্প

#১৪ টির মধ্যে ১২ প্রকল্প অনুমোদন

#বিআরটি প্রকল্প দানবীয় ও অপরিকল্পিত

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্পে প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে সংশয় থাকায় একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ব্যয় পরিমাপ করতে একাধিক মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্প তত্ত্বাবধান করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর জন্য ৮০৪ ফ্ল্যাট নির্মাণ করার কথা রয়েছে।

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট যেটি বিআরটি প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এটিকে দানবীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরিকল্পিত ও দানবীয় মেগা প্রকল্পে ভুল নকশা চিন্তারও বাইরে। তিনি বলেন, দেশি ও বিদেশি নকশাকারক, সমীক্ষা ও সম্ভাব্যতা যাচাইকারী ও বিদেশি পরামর্শকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

অর্থবছরের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রবিবার এসব কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সভায় উত্থাপন করা ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৮ হাজার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ ১৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সভায় বিআরটি প্রকল্পটির ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ২০টি ফায়ার স্টেশনসহ একনেকে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ একনেক সদস্যরা।

জুলাই শহীদদের আবাসন প্রকল্প বাদ যাওয়ার বিষয়ে একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা মনে করি প্রকল্পটির যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া উচিত। জুলাই যোদ্ধাদের সব প্রকল্প এক জায়গায় এনে সমন্বয় করা উচিত। এটা ভালো উদ্যোগ, আরো পরিকল্পিতভাবে এগোতে চাই আমরা।
বিআরটি প্রকল্পের সমালোচনা করে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিআরটি প্রকল্পটিতে ভুল নকশার পরিমাণ চিন্তারও বাইরে। যারা এ প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেছিলেন তাদের বাংলাদেশের আঞ্চলিকতা বোঝা উচিত। দানবীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিআরটি প্রকল্পটি দানবীয় ও অপরিকল্পিত। কোথাও ওপর দিয়ে গেছে, কোথাও নিচে গেছে। এতে লিফট দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাসা বাড়ির লিফটই তো কিছুদিন পর পর নষ্ট হয়ে যায়। এটি তো পাবলিক চলার লিফট। যারা এর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত, যারা নকশা করেছেন এবং যারা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন- সব বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিআরটি প্রকল্পটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার যৌথ অর্থায়নে কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এ ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। নানা ধাপে ব্যয় বাড়িয়ে এটি এখন ৬ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকায় ব্যয় প্রাক্কলন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রবিবারের একনেকে প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু একনেক সেটি অনুমোদন করেনি।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন ও কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিক সুবিধা গড়ে তোলা। এছাড়া গ্রামীণ স্যানিটেশন, বহদ্দারহাট খাল খনন, রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ, মিরপুর সেনানিবাসে অফিসার্স মেস নির্মাণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নও প্রকল্প তালিকায় রয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর সম্প্রসারণ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কন্দাল ফসল গবেষণা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পও এদিন অনুমোদিত হয়। এছাড়া সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে অনুমোদিত ১৮টি প্রকল্পের বিস্তারিত একনেক সদস্যদের অবহিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে: গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন, হাতি সংরক্ষণ, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ঢাকা উত্তর ও রাজশাহী নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

সভায় অনুমোদিত ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন, ৪টি সংশোধিত এবং ২টি কেবল মেয়াদ বাড়ানোর প্রকল্প। প্রকল্পগুলোতে সরকারি অর্থায়ন ৮০৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ