জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে—বিষয়টি এখন সর্বজন স্বীকৃত। আর এই প্রভাবের একটি বড় ধাক্কা যাবে এরই মধ্যে অতিরিক্ত জনসংখ্যার রাজধানী শহর ঢাকার ওপর দিয়ে। এক গবেষণার বরাত দিয়ে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গ এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্লুমবার্গ সিটি ল্যাবের গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোর জনমিতি ব্যাপক পরিবর্তন হবে। কারণ পরিবেশ ও আবহাওয়াসংক্রান্ত চরম ঘটনাগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিজ এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে জনাকীর্ণ শহরগুলোতে চলে যেতে বাধ্য করবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সি-৪০ সিটিজ কোয়ালিশন এবং মেয়র মাইগ্রেশন কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে চরম বন্যার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকায় আরও ৩১ লাখ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নেবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখের বেশি।
এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় প্রায় ৬ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হবে এবং তারা সবাই দেশটির রাজধানী বোগোটায় বসতি স্থাপন করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ, শহরটির বর্তমান ৮০ লাখ বাসিন্দার সবাই ব্যাপক পানীয় জলের ঘাটতিতে আছে।
প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের একাধিক অঞ্চলে জলবায়ু অভিবাসনের ওপর ফোকাস করেছে। বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের ওপর ফোকাস করা হয়েছিল এই গবেষণা। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসারণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না করলে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে দ্রুততম বর্ধনশীল ১০টি মেগাসিটি চলতি শতকের মাঝামাঝি নাগাদ মোট ৮০ লাখ অভ্যন্তরীণ অভিবাসী দেখতে পারে।
সি-৪০ সিটিজের অভিবাসন ক্যাম্পেইনের সিনিয়র ম্যানেজার ক্লডিয়া হুয়ের্তা বলেন, ‘লোকজন এমন শহরগুলোতে যেতে চাইছে, যেখানে তারা সুযোগ, আবাসন ও সামাজিক সংযোগ খুঁজে পেতে পারে এবং এটি খুঁজে পেতে তাদের বিদেশে যাওয়ার জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরগুলোতে জনসংখ্যার অতিরিক্ত প্রবাহ স্থানীয় পরিষেবাগুলোতে আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ত্বরান্বিত করবে। এর ফলে উল্লিখিত শহরগুলোও নিজস্ব জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, যার অর্থ আগত অভিবাসীদের, যাদের বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন করবে। এ কারণে সম্ভবত শহরগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যদি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, তবে শহরগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনে আসা অভিবাসীদের কারণে যেসব নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে, তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে। তবে কার্বন নিঃসারণ হার যদি প্যারিস চুক্তি অনুসারে না হয়, তাহলে বোগোটা, রিও ডি জেনিরো ও করাচিতে অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসীর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বাড়তে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, কার্বন নির্গমন হ্রাসে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অনুপস্থিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কিছু শহর এরই মধ্যেই জনসংখ্যার ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে সিয়েরা লিওন, ঘানা ও জর্ডান উল্লেখযোগ্য। এমন একটি শহর, যা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে লাখ লাখ শরণার্থীদের আতিথেয়তা করার জন্য অপরিচিত নয়—তরুণ নতুনদের জন্য সবুজ স্থান এবং শিক্ষা কার্যক্রম তৈরি করছে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সবাইকে ঢাকা শহরে না নিয়ে তাদের আশপাশের অভিবাসীবান্ধব শহরে সরিয়ে নিয়ে রাজধানীর ওপর অতিরিক্ত চাপ কমানো সম্ভব হবে। গবেষকেরা বলছেন, এই বোঝা কেবল শহরগুলোর ওপর চাপানো উচিত নয়। জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে জাতীয় সরকার ও বেসরকারি খাতকে তাদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।