ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের দাবি

ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থপাচার, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতি রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল।

রোববার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তানভীর আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাসুম বিল্লাহর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সমগ্র ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতের সংস্কারের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পক্ষ হতে কাউন্সিল তার এ প্রত্যয়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সমগ্র ব্যাংকিং সেক্টর সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন জরুরি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণ, গভর্নর পদকে সাংবিধানিক পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবস্থান উন্নীতকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে অন্তর্ভুক্তকরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও কর্পোরেট প্রভাবমুক্তকরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনি ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, সুপারভিশন ও পরিদর্শন কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণ, কেবল জাতীয় সংসদের নিকট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহিতার বিধান কার্যকরকরণসহ নানাবিধ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কাউন্সিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।

পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থপাচার, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতি রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা আবশ্যক। সর্বোপরি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মর্যাদা সমুন্নত রেখে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করবে মর্মে কাউন্সিল প্রত্যাশা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল, ঢাকার পক্ষ থেকে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক পরিবারের পক্ষ থেকে তাকেও আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী পরিবর্তনের বাস্তবতায় রাষ্ট্রের সামগ্রিক সংস্কারের সাথে সংহতি প্রকাশ করে গত ৭ আগস্ট (বুধবার) সকালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের পদত্যাগ এবং অন্যান্য দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক আন্দোলন শুরু হয়। কাউন্সিল কর্মকর্তাদের যৌক্তিক যেকোনো দাবি-দাওয়ার প্রতি সর্বদা সমর্থন প্রকাশ করে। আলোচ্য ক্ষেত্রেও কর্মকর্তাগণের যৌক্তিক দাবিগুলোর বিষয়ে কাউন্সিলের অবস্থান ব্যতিক্রম নয়। তবে, উক্ত আন্দোলনের মাঝে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত এমএলএসএস (অরনেট) সমবেত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের সময়কে কাজে লাগিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত এমএলএসএস কর্তৃক এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও বিধি-বিধান পরিপন্থি মর্মে কাউন্সিল মনে করে। এছাড়া, উক্ত আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এক্সিকিউটিভ ফ্লোরসহ অফিস প্রাঙ্গণে শীর্ষ কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংঘটিত অশোভন আচরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একটি সুশৃঙ্খল কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ভবিষ্যতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট হতে সবাই অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সমগ্র ব্যাংকিং সেক্টরের সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কাউন্সিল এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়ন করত তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল, সুশৃঙ্খল ও সুচারুভাবে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মপরিবেশ বজায় রাখার জন্য কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।