কাঁচা মরিচে আগুন লেগেছে। রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মরিচ। বাজারভেদে ৪৪০ টাকা থেকে শুরু করে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
কারওয়ান বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) মরিচের দাম ১২০০ টাকা থেকে বেড়ে একদিনের ব্যবধানে ২০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এই হিসাবে পাইকারিতেই প্রতি কেজি মরিচের দাম ৪০০ টাকা এখন।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন ১১০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে বেশিরভাগ বাজারে দাম কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা এবং ১৫০ টাকা পোয়া।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, যাদের মরিচ পাইকারি বাজার থেকে কেনা তারা কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে পারলেও যারা আজ সকালে মরিচ কিনেছেন তাদের চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হঠাৎ কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা। অনেকে মরিচের দাম শুনে কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, হুট করে কাঁচা মরিচের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ বলতে পারছেন না অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ী। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কম। কাঁচা মরিচের ঘাটতি রয়েছে। সবকিছু মিলেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে।
রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক বিক্রেতা কাঁচা মরিচের পোয়া বিক্রি করছেন ১২০ টাকা। পাশেই আর এক বিক্রেতা দাম হাঁকছেন ১০ টাকা বেশি। আবার শান্তিনগর বাজারে ওই মরিচের দাম উঠেছে ১৫০ টাকা।
কাঁচা মরিচের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিলন জাগো নিউজকে বলেন, রোববার এক পোয়া কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ আড়তে দাম আরও বেড়ে গেছে। প্রতি পাল্লা কাল ছিল ১২০০ টাকা, আজ ১৯০০ টাকা কিনেছি। যে দামে কিনতে হচ্ছে তাতে ১২০ টাকার কম পোয়া বিক্রির উপায় নেই।
কাঁচা মরিচের এমন দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের দামে আগুন লেগেছে! কী কারণে এমন দাম বেড়েছে বলতে পারবো না। আড়তে কাঁচা মরিচ খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে মরিচের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় ৫০-১০০ টাকা করে বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ফকিরাপুল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা। এক কেজি নিলেও ৬০০ টাকা। এর নিচে কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি করা সম্ভব না।
কোনো কোনো ব্যবসায়ী মরিচের দাম ৮০০ টাকাও হাঁকছেন বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর।
কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম বাড়ার মূল কারণ বন্যা আর বৃষ্টি। তাতে যেটুকু সমস্যা হয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছুটা বাড়তি বিক্রি করছে। এর পেছনে কোনো বিশেষ চক্র থাকতে পারে।
কারসাজির মাধ্যমে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মালিবাগের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। আমাদের ধারণা, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভালোভাবে বাজার মনিটরিং করলে দাম কমে আসতে পারে।
বাজারে কাঁচা মরিচের দাম শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন এনামূল হোসাইন। এই ক্রেতা বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসে দাম শুনে অবাক হয়েছি। এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। রোববার খবর দেখলাম কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকায় নেমেছে। একদিনের ব্যবধানে এতো বাড়লো।
তিনি বলেন, আসলে বাজারে যাদের নজরদারির করার কথা তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণেই মুনাফালোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কারওয়ানবাজারে বাজার করতে আসা খায়রুল হোসেন বলেন, কাঁচা মরিচে ঠাডা পড়ছে। হঠাৎ দেশে কী এমন হয়ে গেল যে কাঁচামরিচের দাম এতো হয়ে যাবে?
পাইকারি মরিচ ব্যবসায়ী শামসুল বলেন, বন্যা ও বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না, দামও সেখানে হু হু করে বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে জোগান না থাকলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এখন ভারত থেকে প্রচুর মরিচ আমদানি করা দরকার, সরকারকে সে বিষয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।