আমরা উত্তর কোরিয়া হতে চাই না : আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গণতান্ত্রিক সমাজ হলে তো দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। গণতান্ত্রিক সমাজ চাইব, আর ভাববো আপনি-আমি সব বিষয়ে একমত হতে, তাহলে তো উত্তর কোরিয়াতে বাস করতে হবে। আমরা তো উত্তর কোরিয়া হতে চাই না। সেই রকম প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে গত ১৬ বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে মতপার্থক্য ও ভিন্নমত থাকলেও সহিষ্ণুতা থাকবে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের দলগুলো ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এখন জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে। তার লিখিত রূপ হিসেবে জাতীয় সনদের কথা বলা হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সামাজিক চুক্তি। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সঙ্গে চুক্তি করবে। ফলে নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হবে, অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, রাষ্ট্র জবাবদিহিতার মধ্যে যাবে। এ জায়গাটা তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন মত নেই।

তিনি বলেন, আজ আমাদের ঐক্যের যে জায়গা দরকার, এ দেশে এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি করা দরকার যেটা জবাবদিহিমূলক হবে। যেটি কোনো অবস্থাতে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠবে না। এমন ব্যবস্থা করবে যেন নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এ জায়গায় ঐক্য আছে। ফলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও এ ঐক্য ধরে রাখা দরকার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, মতপার্থক্যকে যাতে শত্রুভাবাপন্ন না করে তুলি। প্রয়োজন নেই, আমরা একত্রে পারি। সেটা প্রমাণ করেছেন। ঐক্যের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। সেই সনদ তৈরি করতে হবে যা সামাজিক চুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যেটা দিকনির্দেশনা দেবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সনদ। এটা নাগরিকদের স্বপ্ন। তারা নিরাপত্তা চায়, ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাকে না জানিয়ে সরকার যা ইচ্ছা তা করতে পারে না।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য নাগরিক তন্ত্রের সুপারিশের সমালোচনার বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রচলিত শব্দ হচ্ছে প্রজাতন্ত্র। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলেছি প্রজাতন্ত্র বাদ দিয়ে নাগরিক তন্ত্র করি। অনেকের আপত্তি আছে, থাকতেই পারে। প্রজা না হওয়া ভালো। প্রজা হলে প্রভুর একটা সামন্ততান্ত্রিকতা তৈরি হয়।

গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের জনগণ নানান স্বপ্ন দেখলেও তা ডাকাতি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি বলেন, স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা গেলেও বাস্তবতায় ছুতে পারিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের স্বপ্নের নতুন একটা পর্বে এসে পৌঁছেছে। এবার আমরা যে স্বপ্নের কাছাকাছি এসেছি, তার বাস্তবায়ন না ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে বহুকালের জন্য স্বপ্ন দেখার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। স্বপ্ন দেখবার মতো কোনো চোখ এ রাষ্ট্রের থাকবে না। তাই এবার স্বপ্নকে ডাকাতি হতে দেওয়া যাবে না। এখানে জাতির শক্ত অবস্থান দরকার।

আহমদ পাবলিশিং হাউজের প্রকাশক মেছবাহ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বইয়ের লেখক ডা. ওয়াজেদ খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।