আমি কখনও ‘দরবেশ’ হবো না: আবদুল আউয়াল মিন্টুর

টিবিএস রিপোর্ট নিজে কখনও ‘দরবেশ’ হবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু।

সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনভারসেশন উইথ ইআরএফ মেম্বারস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘বিভিন্ন আলোচনা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে বর্তমান সময়ের সালমান এফ রহমান মনে করা হয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

জনাবে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘‘আমি কখনও দরবেশ হবো না। যদি আমি তাই হতে চাইতাম, তাহলে আমার জীবনে অনেক সুযোগ ছিল। দরবেশ সাহেব থেকে আরও বেশি ক্ষমতাবান ছিলাম এক সময়। এটা অনেকে সাক্ষী দিবে। তখন দরবেশ সাহেবরা কিছুই ছিল না। তখনও ওই ক্ষমতা অপব্যাবহার করে আমি উপকৃত হই নাই, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও এরশাদ সরকার- কোন সময়ই আমি কখনও সরকারের সঙ্গে কোন ব্যবসা করিনি। টুকটাক যেটুকু ব্যবসা করেছি, নিজে নিজেই করেছি।’’

পুঁজিবাজারে নতুন কোন দরবেশের আবির্ভাব হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমি কখনও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করিনি এবং পুঁজিবাজার থেকে কোন মুনাফাও করিনি।

‘তবে কিছু কিছু লোক পুঁজিবাজারকে লটারিতে পরিণত করেছে। তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে শেয়ার কেনাবেচা করছে। তারা মনে করে, আজ যে শেয়ার কিনবো, ক’দিন পরেই তার দাম বাড়বে। তখন বিক্রি করে মুনাফা করবো’- যোগ করেন তিনি।

বেক্সিমকো গ্রুপের কেন বিক্রি করা হবে, সেই প্রশ্ন রেখে এফবিসিসিআই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক যদি অন্যায় করে থাকে, যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া মেনে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হওয়া উচিত। আইন না মেনে বা আইনের অপব্যবহার করে আপনি কাউকে দোষারূপ করেন, সেটার পক্ষে আমি না। বেক্সিমকোর যে প্রতিষ্ঠানগুলো শুনতেছি বিক্রি করে দেবে, কারা বিক্রি করবে, কেন বিক্রি করবে?

‘‘এ প্রতিষ্ঠানে তো ৮২,০০০ লোক চাকরি করে। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি চাই, কোন উৎপাদনশীলখাতে সরকার এমন কোন কাজ করবে না, যাতে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হবে, যাতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে।’’

মিন্টু বলেন, যদি বেক্সিমকো প্রতিষ্ঠানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা কোন অন্যায় করে থাকে, তাদের বিচার হউক- এ নিয়ে আমি কোন কথা বলবো না। কিন্তু সরকারের এমন কোন কাজ করা উচিত না, যে কাজে এই ফ্যাক্টরিগুলো বা উৎপাদনমুখী কোন শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়। প্রতিষ্ঠান কখনও অন্যায় করতে পারে না, মালিক অন্যায় করতে পারে। তাই মালিকের শাস্তি হতে পারে, প্রতিষ্ঠান যেন বন্ধ না হয়।

এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে ঋণ খেলাপি আছে, ২৮৪০০০ কোটি টাকা। এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, উৎপাদনশীলখাতের সমস্যাগুলোর কোন সমাধান হয়নি। এখনও সব জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা ঠিকমতো কাজ করছে না। ব্যাংকের সমস্যা আছে, সে কারণে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যনতুন সার্কুলার জারি করতেছে, তাতে খেলাপি ঋণ কমার কোন সুযোগ আমি দেখছি না।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাইভেট সেক্টর ক্রেডিট গ্রোথ ছিল গড়ে ১৩-১৪%, সেটা এখন কমে হয়েছে ৮%। এটা খুবই বিপদজনক এবং ভবিষ্যতের জন্য একটা বিপদসংকেত। এ থেকে স্পষ্ট যে, দেশে কোন বিনিয়োগই হচ্ছে না। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান কিভাবে হবে?

ব্যবসায়ীদের একাউন্ট ফ্রিজ করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে মিন্টু বলেন, ‘এভাবে অন্যায়ভাবে একাউন্ট ফ্রিজ করা আমি নিজেও পছন্দ করি না। সমাজকে শক্তিশালী করতে হলে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এখন মনে হচ্ছে, আপনার ইচ্ছা আরেকজনের একাউন্ট ফ্রিজ করে দিচ্ছেন। এটা আমি পছন্দ করি না, এটা আইনসিদ্ধও না। এটা কোর্টের প্রসেসে হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে তো বিনা কেসে মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া যায়।’

‘একজনের বিরুদ্ধে তদন্তে যদি যথাযথ প্রমাণ থাকে, তাহলে ফ্রিজ করেন’- বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পাওয়ার পর দূর্বল ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এজন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচিত সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। এখন আমরা কার কাছে যেয়ে কি বলবো?

মূল্যস্ফীতির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কতোটা দায়ী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২-৩টা ইস্যুতে সিন্ডিকেট হতে পারে। তা হলো ভোজ্যতেল, চিনি, ভুট্টা ও গম। এগুলো বিপুল পরিমাণে আমদানি করতে হয়, এতে ১০ মিলিয়ন, ২০ মিলিয়ন ডলারের এলসি খুলতে হয়। তাই ছোট ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারেন না। কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এগুলো আমদানি করে, তারাই ব্যাংকে সবচেয়ে বড় বড় ঋণ খেলাপি।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, টিসিবি ট্রাকের পেঁছনে দিন দিন মানুষের লাইন লম্বা হচ্ছে। আগে গরীব মানুষ টিসিবির ট্রাকের পেঁছনে লাইন করে পণ্য নিতো। গত চার সপ্তাহে এই লাইন ২০% বড় হয়েছে। এখন মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছে। আর কিছুদিন পর হয়তো আমাদেরও টিসিবির ট্রাকের পেঁছনে লাইনে দাঁড়াতে হবে।

মূল্যস্ফীতির জন্য ১৬-১৭টি কারণ থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু মুদ্রা সরবরাহ সংকোচন করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর মুদ্রানীতির বেশি ব্যবহার করায় ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে না। তখন পণ্য সরবরাহ আরও কমবে। তাতে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুলক মুদ্রানীতি থেকে কিছুটা হলেও এখন সরে আসছে।

লিখিত বক্তব্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেসরকারিখাতের বিদেশি মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ডলার। আর ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এটি বেড়ে হয়েছে ২৩০০ কোটি ডলার। এসব ঋণ স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চ সুদের। যখন ঋণ নিয়েছে, তখন এক্সচেঞ্জ রেট ছিল ৮০-৮৪ টাকা, বর্তমানে ১২২ টাকা। অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতা এসব ঋণ ফেরত দিতে পারবে না। পরিণতিতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে।