ইফতারের রাজ্য চকবাজার : দামে চড়া, ঐতিহ্যের স্বাদ-মান নিয়েও সংশয়

ঢাকা শহরে ঐতিহ্যের আয়োজন চক সার্কুলার রোডের ইফতার বাজার। এখানে বাহারি রকমের ইফতার সামগ্রীর আয়োজন করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ক্রেতারা। পুরো রমজান মাস জুড়ে এখানে চলে জমজমাট ইফতার ব্যবসা।

তবে এই বাজারের ইফতার পণ্যগুলোর দাম ও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্রেতাদের। কেউ কেউ বলছেন, ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর স্বাদ একবার হলেও চেখে দেখা উচিত। কিন্তু এই বাজারে ইফতার সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। এ ছাড়া, খোলা আকাশের নিচে দুপুর থেকে বিক্রি শুরু হওয়ায় ধুলাবালি পরে খাবারগুলোতে। ফলে সেই খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, সেটাও ভেবে দেখা উচিত।

শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকেল চারটায় চক সার্কুলার রোডের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের মধ্যে তিনটি সারিতে ক্রেতাদের যাতায়াতের জায়গা রেখে চারদিকে ইফতার আইটেম নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর ইফতার সামগ্রী রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। এমনকি খাবারগুলোও কোনও কিছুতে ঢাকা নেই। ক্রেতাদের পদচারণায় সড়কের ধুলাগুলো পরছে খাবারের ওপর। একই সঙ্গে বিক্রেতারা কিছু সময় পর পর খাবারগুলোতে তেল মাখাচ্ছেন, যেন দেখতে চকচক করে। দুই-চারটি আইটেম ছাড়া বাকি খাবারগুলো একেবারেই প্রায় ঠান্ডা।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতারা প্রধান সড়ক থেকে পায়ে হেঁটে চক সার্কুলার রোডে প্রবেশ করছেন। তারা প্রতিটি দোকানের সামনে উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছেন। কোনও খাবার দেখে পছন্দ হলে দাম জিজ্ঞেস করছেন। দামে না মিললে সামনের দোকানগুলোর দিকে এগুচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পছন্দমতো আইটেমগুলো দরদাম ছাড়াই কিনছেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বাজারে সুতি কাবাব, খাসির লেগ রোস্ট, আস্ত মুরগির রোস্ট, আস্ত হাঁসের রোস্ট, হালিমের মতো মাংসজাতীয় নানা পদের খাবার রয়েছে। এর মধ্যে সুতি কাবাব ১২০০ টাকা কেজি, খাসির লেগ রোস্ট ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৪৫০ টাকা, আস্ত হাঁসের রোস্ট ১৫০০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ৮০ টাকা পিস, বড় বাপের পোলায় খায় ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ধানমন্ডি থেকে প্রথমবারের মতো চকবাজারে ইফতার কিনতে এসেছেন রনি। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চকবাজার মসজিদের সামনের পুরো গলিটা ঘুরে দেখলাম। একই জিনিস একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি করছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে আমার কাছে দাম বেশি মনে হয়েছে। এক পিস ছোট মুরগির রোস্ট ৪৫০ টাকা দাম চাইল। এটা অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, আমি যেহেতু আজ প্রথমবারের মতো কিনতে এসেছি। ফলে মানের বিষয়টি এখনই বলতে পারছি না। তবে দেখে লোভনীয় মনে হলেও খেতে কেমন হবে, সেটা খাওয়ার পর বলতে পারব।

ইস্কাটন থেকে আসা জাহিদ আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঐতিহ্যের কথা বলায় সবাই এখানে আসেন ইফতার কিনতে। ফলে বরাবরই দাম বেশি থাকে ইফতারের। তারপরও মানুষজন কিনতে আসেন। খোলা আকাশের নিচে বিক্রি হয় সব ধরনের খাবার। দুপুর থেকেই এই ইফতার বাজার বসে। ফলে কী পরিমাণ ধুলাবালু খাবারের ওপর পড়তে পারে তা আপনি নিজে একবার চিন্তা করেন। এখানে সবাই পায়ে হেঁটে চলাচল করে। ফলে রাস্তার ধুলোগুলোই ওপরে উঠে আসে।

চক সার্কুলার রোডে বাহারি রকমের কাবাব বিক্রি করতে দেখা গেছে আবু হাসানকে। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই ব্যবসাটা একদিনের না। গত দুই বছরের তুলনায় এবার বাজারের দাম অনেকটা কম। কারণ কম দামে জিনিস কিনতে পারছি বলেই কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর আস্ত হাঁসের রোস্ট বিক্রি করেছি দুই হাজার টাকায়। একই হাঁস তার আগের বছর বিক্রি করেছি ২৫০০ টাকায়। কিন্তু এবার ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি। এর আগে খাসির লেগ বিক্রি করেছি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। এবার বিক্রি করছি ৯০০ টাকায়। বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।

আরেক ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করি খাবারগুলো ঢেকে রাখতে। ক্রেতারা প্রতি মিনিটে-মিনিটে আসেন। ফলে সবসময় খাবার ঢেকে রেখে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা খাবারের মান বজায় রাখার চেষ্টা করি।

এদিকে ইফতার সামগ্রীর মান দেখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্যদের চক সার্কুলার রোডে নিয়মিত টহল দিতে দেখা গেছে।