মুসলিম জাতির পিতা বলা হয় হজরত ইবরাহিম আ.-কে। তাঁর দোয়ার ফসল ছিলেন আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা.। তিনি মানুষের আত্মশুদ্ধির জন্য একজন নবী প্রেরণের দোয়া করে বলেছিলেন, হে আমাদের প্রভু! এ ঘরের পড়শিদের মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠাও, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতগুলো পাঠ করবেন। তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৯)
দোয়ার পাশাপাশি তিনি আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্য মুসলিম শব্দটি চয়ন করেছিলেন। কোরআনের বর্ণনা মতে তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে বলেছেন, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৮)
হজরত ইবরাহিম আ.-এর প্রস্তাবক্রমে মুহাম্মদ সা.-এর উম্মত এই বিশেষ নাম লাভ করেছে। এজন্য তাদের মুসলমান বলা হয়। মুসলমান অর্থাৎ, আল্লাহর বিধান, হুকুমের সামনে আনুগত্য ও আত্মসমর্পনকারী।
আল্লাহর আনুগত্যের সারমর্ম হলো, রিপুর কামনা-বাসনার বিপরীতে আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য এবং স্বেচ্ছারিতার অনুসরণ ত্যাগ করে হেদায়েত অনুসরণ করা।
তাই ইবরাহিম আ. তাঁর সন্তানদের উপদেশ দিয়েছেন এবং তাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের উপর মৃত্যুবরণ করবে না। অর্থাৎ ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষাকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মৃত্যুও ইসলামের উপরই দান করেন।
নবী ইয়াকুব আ.ও তার সন্তানদের কাছে একই অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন বলে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।
কোনো কোনো রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, তোমরা জীবনে যে অবস্থাকে আঁকড়ে থাকবে, তোমাদের মৃত্যুও সে অবস্থাতেই হবে এবং হাশরের ময়দানেও সে অবস্থতেই উপস্থিত হবে। আল্লাহ তায়ালার চিরন্তন রীতিও তাই। যে বান্দা নেক আমলের ইচ্ছা করে এবং সেজন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সে কর্মেরই সামর্থ্য দান করেন এবং তার জন্য তা সহজ করে দেন।
ইবরাহিম আ. ও ইয়াকুব আ.-এর এই দোয়া ও অঙ্গীকারের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
وَ وَصّٰی بِهَاۤ اِبۡرٰهٖمُ بَنِیۡهِ وَ یَعۡقُوۡبُ ؕ یٰبَنِیَّ اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰی لَكُمُ الدِّیۡنَ فَلَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
আর ইবরাহীম ও ইয়াকুব তাদের পুত্রদেরকে এরই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, হে পুত্ৰগণ! আল্লাহই তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। কাজেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে তোমরা মারা যেও না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৩২)