উত্তরাঞ্চলে ভরা বর্ষায় বৃষ্টি নেই, সেচ প্রকল্পের পানির দামও চারগুণ বেশি

(ডিমলা,নীলফামারী): ভরা বন্যা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হলেও উত্তরাঞ্চলে ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতি। রংপুর বিভাগের পাঁচ কৃষি অঞ্চলে মারাত্নক পানির সংকট এই ভরা বন্যা মৌসুমেও। আমন চাষের ভরা মৌসুম চললেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খালি পড়ে আছে অনেক জমি। বেশ কিছু জমিতে কিছু চারা লাগানো হলেও পানি সংকটে সেগুলোও পুড়ছে প্রচন্ড তাপদাহে। এ অবস্থায় আমনের চারা রোপণে বিকল্প সেচের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

উত্তরের পাঁচ কৃষি অঞ্চল হলো, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৬ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ১৩ জুলাই পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ২১৮০ হেক্টর জমিতে চারা লাগানো সম্ভব হয়েছে। গত বছর একই সময়ে চারা লাগানো হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে।
অপরদিকে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারে স্থানীয় সেচ সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন দাবি সেচ এলাকার কৃষকদের।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সেচ গ্রহীতার নিকট থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না। এলাকায় অনেক সমিতি রয়েছে। সেই সমিতির মাধ্যমে কৃষকেরা সেচের পানির টাকা পরিশোধ করেন।

ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মনেয়ার হোসেন বলেন, এই ভরা মৌসুমে বৃষ্টি নেই, বৃষ্টির অভাবে আমরা কোন জমিতে এখন পর্যন্ত ধান বীজ রোপণ করতে পারি নাই। প্রান্তিক চাষিরা আমন আবাদে এখনও অধির অপেক্ষা করছে বৃষ্টির জন্য।


আবহাওয়া অফিস জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর বর্ষা মৌসুমের প্রথম মাস আষাঢ়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করায় প্রচণ্ড তাপদাহে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাচ্ছে। ১০ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৮৯ মিলিমিটার। গত জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৪৬৮ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৩০৯ মিলিমিটার।


রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলে মাঝারি খরা বিরাজ করছে। গতকাল রোববার রংপুরে ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে।

নীলফামারীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু নিচু জমিতে চারা লাগানো হলেও তুলনামূলক উঁচু জমিগুলো পানির অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। কোথাও সচ্ছল কৃষকরা শ্যালো মেশিন অথবা সেচের পানি দিয়ে জমি তৈরিতে ব্যস্ত। অনেকে স্থানীয় পদ্ধতি বালতি দড়ি, দোন, সেউতি ও শ্যালো মেশিন দিয়ে চারা বাঁচানোর কাজ করছে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমন রোপনের এই ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। তার ওপর আবার চলছে প্রচন্ড তাপদাহ। এমতাবস্থায় সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। তবে ধানের চারা রোপণের এখনও অনেক সময় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা স্বল্পমেয়াদি রোপা আমন ধান কাটার পর আলুসহ আগাম রবি ফসল চাষ করবেন, তাদের সেচের মাধ্যমে চারা রোপণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ