এক বছরে প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই দিন থেকেই টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ।

যুদ্ধ শুরুর এই এক বছরে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার মানুষ। দখলদারদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার ৮৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৭৬৫ জন শিশু এবং ১১ হাজার ৩৪৬ জন নারী। আহত হয়েছেন ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ।

এ ছাড়া গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন।

শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের অবিরাম বিমান ও স্থল হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখনও সফল হয়নি। যুদ্ধের অবসান ঘটাবে, এমন চুক্তি চায় হামাস। অন্যদিকে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমেই যুদ্ধের পরিণতি সম্ভব বলে দাবি ইসরায়েলের।

এদিকে, গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধ ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের বিমনা হামলায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু হয়। এরপর দুইদিন পর থেকেই লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। নাসরুল্লাহর মৃত্যুর জবাবে গত ১ অক্টোবর রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, সম্প্রতি ইরান যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তা ইসরায়েল বরদাস্ত করবে না। নিজের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের রক্ষা করা শুধু অধিকারই নয়, এটি ইসরায়েলের দায়িত্বও। ইসরায়েল সেই দায়িত্ব নিশ্চিতভাবেই পালন করবে।

তিনি আরও বলেন, গাজায় হামলা শুরুর এক বছরের মাথায় ইসরায়েল বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই করছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস, ইয়েমেনের হুতি, ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়ারা। আর এই সব ফ্রন্টের নেপথ্যে রয়েছে ইরান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে হামলা চালিয়ে দেশটির ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামাস এবং তাদের মিত্র গোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) অন্তত এক হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা। সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০৫ জনকে হত্যা করে তারা। সেইসঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২৪২ জনকে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা। এদের বড় অংশই বেসামরিক।

বস্তুত ১৯৪৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এই হামলা ছিল রাষ্ট্রটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এদিনই ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ইসরায়েল শুরু করেছিল, সেই যুদ্ধকে ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য।