একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না

#ঐকমত্য কমিশন

একই ব্যক্তি একযোগে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন নাÑ এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করেছে। তবে কেউ চাইলে ‘জাতীয় সনদ’-এ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) যুক্ত করার সুযোগ থাকবে।

এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফের দেখা দিয়েছে মতানৈক্য। বাছাই কমিটি ব্যর্থ হলে বিচার বিভাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পক্ষ নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ফলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার ১৭তম দিনের সংলাপ শুরুতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না এমন মতামতে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। তবে কয়েকটি দল ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। তারা চাইলে জাতীয় সনদে তাদের আপত্তি যুক্ত করতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ সংশোধনী প্রস্তাব আনছে ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ

এ বিষয়ে প্রস্তাব নিয়ে একাধিক দিন সংলাপ আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপি ও সমমনা দল- এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং আমজনতার দল একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা থাকাতে কোনো সমস্যা দেখছে না। এ কারণে একই সঙ্গে একাধিক পদে না থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপের পক্ষে নন তাঁরা। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অধিকাংশ দল একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী থাকার বিপক্ষে মত দেন। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনুরোধ, যারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে আগ্রহী, আপনারা প্রয়োজন মনে করলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। এটা আমাদের অনুরোধ। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কিন্তু আমাদের অতীতে যেভাবে নোট অব ডিসেন্টের কথা বলা আছে, সেভাবে জাতীয় সনদে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবে। এটা সিদ্ধান্ত হিসেবে আপনাদের জানাচ্ছি।

মঙ্গলবারের আলোচনার আলোচ্যসূচিÑ প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান (সিদ্ধান্ত গ্রহণ); তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত প্রস্তাব—সর্বশেষ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ; নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, যদি বাছাই কমিটি ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায় বিচার বিভাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিধান কার্যকর করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো ভূমিকা থাকবে না। তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন না। বিএনপির এ অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে গণসংহতি আন্দোলন, এনসপি ও আরো কয়েকটি দল তাতে দ্বিমত জানায়।

সংলাপের মধ্যাহ্ন বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, বিএনপি ও জামায়াত বিচার বিভাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাবে একমত হওয়ায় অন্যান্য দলের বিকল্প মতামত আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টা আনা হলে বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণের ঝুঁকি রয়েছে। আবার রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দিলে ১/১১-এর অভিজ্ঞতা সামনে আসে। রুবেল জানান, নতুন বিকল্প হিসেবে তারা সাবেক প্রধান বিচারপতির বাইরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা প্রয়োজনে শেষ অপশন হিসেবে বিবেচনায় আনা যেতে পারে।

আলোচনার শুরুতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ