হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী মাদইয়ান নামক শহরে এক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। তারা আল্লাহর একত্ববাদ থেকে দূরে ছিল এবং বেশ কিছু বদাভ্যাস ছিল তাদের মাঝে। তাদের বদাভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ওজন ও পরিমাপে কম দেওয়া। এছাড়াও তারা ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজের মতো ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল।
আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়েতের জন্য শুয়াইব আ.-কে পাঠালেন। শুয়াইব আলাইহিস সালাম ছিলেন সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। তিনিও নবীদের রীতিনীতি ও অভ্যাস অনুযায়ী নিজের জাতিকে এক ও শরিকবিহীন আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেন। এবং কারো হক নষ্ট না করে ওজন ও মাপে কম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন।
আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বচ্ছল রেখেছেন। তোমরা তাঁর এই অনুগ্রহের কথা ভুলে যেও না। তিনি তাদের কাছে নিজের শঙ্কার কথা প্রকাশ করে বললেন, তোমরা যদি শিরক ও অত্যাচার থেকে বিরত না থাকো, তাহলে তোমাদের এই ভালো ও স্বচ্ছলতা দূরাবস্থায় পরিবর্তিত হবে।
শুয়াইব আ.-এর উপদেশের প্রেক্ষিতে মাদইয়ানবাসী তাঁকে ঠাট্টা করে বললো—
তুমি তো দারুণ কথা বলেছো! তোমার ধর্মনিষ্ঠা আমাদেরকে আমাদের পূর্বপুরুষের রীতিনীতি ও পুরাতন উপাসকদের পরিত্যাগ করতে বলছে! আর এটাও মজার কথা যে, আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদের মালিক থাকবো না, যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো না, কাউকে মাপে, ওজনে কমও দিতে পারবো না!
তখন তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আমার সঙ্গে শত্রুতার জেদে আল্লাহর বিধান পালন থেকে বিরত থেকো না। অন্যথায় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর নূহ, হুদ, সালেহ, লূত আ.-এর জাতির মতো আজাব নাজিল করবেন।
কিন্তু তারা শুয়াইব আ.-এর কথা শুনলো না। তারা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে কোনোভাবেই ফিরে এলো। তাই শুয়াইব আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশে তার সঙ্গী-সাথী ঈমানদারগণকে নিয়ে সেই জনপদ থেকে অন্যত্র নিরাপদে সরে গেলেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আলাইহিস সালামের এক ভয়ঙ্কর হাঁকের মাধ্যমে অবাধ্যদের সবাইকে এক নিমেষে ধ্বংস করে দিলেন।
পবিত্র কোরআনের সূরা হুদের ৮৪-৯৪ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আল্লাহ তায়ালা।