বুখারি ও মুসলিমে কাতাদার সূত্রে আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ দাফনের কাজ শেষ করে যখন সেখান থেকে চলে যায় তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? মুমিন ব্যক্তি বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রসূল। তখন তাকে বলা হয় তুমি তোমার জাহান্নামের ঠিকানা দেখো। আল্লাহ তা‘আলা তা পরিবর্তন করে জান্নাতে তোমার ঠিকানা নির্ধারণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থানকেই দেখতে পায়।
আর মৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মুনাফেক হয়ে থাকে তাহলে তাকেও ফেরেশতাদ্বয় জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? সে উত্তর দিবে আমি কিছুই জানি না। মানুষেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি জান নাই এবং শিখো নাই। অতঃপর লোহার একটি মুগুর দিয়ে তার উভয় কানের মাঝখানে এমন জোরে আঘাত করা হয়, যাতে সে ভয়ানকভাবে চিৎকার করতে থাকে। জিন এবং মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর অন্যান্য সকল বস্তুই সে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৭৪)
কবরের প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে পারবেন নিয়মিত সূরা মূলক পাঠকারীরা। এক হাদিসে হজরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
কোরআন শরিফে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেওয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক, অর্থাৎ সুরা মুলক। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০২, তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭৮৬)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে—হজরত উসমান (রা) যখন কবরের পাশ দিয়ে যেতেন, তখন কান্নায় তার দাড়ি ও বুক ভেসে যেত। লোকেরা জিগ্যেস করত, আপনি জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা শুনেও এত বেশি কান্নাকাটি করেন না, কিন্তু কবরের পাশ দিয়ে গেলে এত কান্নাকাটি কেন করেন? তিনি বলেন, আমি হুজুর (স)-এর নিকট শুনেছি, কবর আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে ব্যক্তি এখানে নাজাত পেয়ে গেল, তার জন্য সমস্ত মনিজল আসান বা সহজ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এখানে মুক্তি পাবে না, তার জন্য হাশর-নাশর আরও ভয়ানক হয়ে দাঁড়াবে।
রাসুল (স) বলেন, প্রতিদিন এশার নামাজের পর রাতে ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি, অর্থাৎ সুরা মুলক তিলাওয়াত করবে, তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব মাফ করে দেওয়া হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯০)।