গাজীপুরে রাতে সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা: আরও যা যা জানা গেল

গাজীপুরের সাবেক মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারধরে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবি, মারধরের শিকার কেউ বাড়িতে হামলা করতে যাননি। কয়েকজন ছাত্রকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছে– এমন খবর দিয়ে উদ্ধারের জন্য তাঁদের ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলে মারধর করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক নাবওল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের রাত সাড়ে ৮টার দিকে বলা হয়, সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা যেন দ্রুত গিয়ে তাদের বাঁচাই। খবর পেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেখানে তাদের উদ্ধার করতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে তাদের আটকে মারধর করে।’

নাবওল আহমেদ আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ফাঁদে পড়েছে বুঝতে পেরে আমরা বহুবার পুলিশকে জানিয়েছি। তারা ঘটনার দুই ঘণ্টা পর এসেছে। যারা হামলা করেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। তাদের হামলায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ১০-১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা এই হামলার বিচার চাই, অনতিবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’

তবে কয়েকজন এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার সাড়ে রাত ৯টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রমের দক্ষিণখানে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় মসজিদের মাইকে মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে জানিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এলাকার লোকজন দা, বঁটি, লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পরে ভেতরে ঢুকে কয়েকজনকে ব্যাপক মারধর করে। এতে অন্তত ১৫ জন গুরুতর জখম হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত ১১টার দিকে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

গাজীপুরের একাধিক ব্যক্তি জানান, ধীরাশ্রমের দক্ষিণখান এলাকা মূলত আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত। এখানকার বেশির ভাগ লোকই আওয়ামী লীগ সমর্থক। এই কথা এলাকার সবাই জানে। তবু মাত্র ১৫-২০ জন লোক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালাতে যাবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। গত রাতের ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। পুলিশের উচিত, বিষয়টি তদন্ত করে বের করা।

গত রাতের ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবককে স্থানীয়রা আটক করেছে। তারা বলছে, ‘আমরা না বুঝে এসেছি। আমাদের মাফ করে দেন।’ তবে এসব যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আরও কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাসভবনের ভেতরে যুবকদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে।

এদিকে হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত পৌনে ২টার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের নেতা মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের কাছে খবর আসে ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর প্রতিহত করতে আমাদের শিক্ষার্থীরা রওনা হন। দ্রুত ১৫-১৬ জন সেখানে চলে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। তাতে বাধা দিলে পেছন থেকে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। তাদের হাতে রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগেই ওই ১৫ জনকে ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।’

শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ বলেন, রাত ১১টা পর্যন্ত গুরুতর আহত অবস্থায় ১৫ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁরা হলেন, বিকাশ (১৫), সামিউল ইসলাম (১৮) রাসেল (২১), শুভ শাহরিয়ার (১৭), হামজা (২১), কাশেম (১৭), আকরাম (২৪), হিমেল (২২), রোহান (২২), নাঈম (২১), ইয়াকুব (২০), গৌরব (২১), হাসান (২২), সাগর (২৩) ও সাজ্জাদ (২১)।

এদিকে গুরুতর আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন, শুভ শাহরিয়া (১৬), ইয়াকুব (২৪), সৌরভ (২২), কাশেম (১৭) ও হাসান (২২)।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। এখানে হামলার খবর পেয়ে আমরা আসি এবং আহত অবস্থায় ১৫ জনের মতো উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ঘটনার বিষয়ে কোনো পক্ষের কাউকেই আমরা পাইনি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বা তথ্য নেওয়ার জন্যও কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। ফলে এখানে আসলে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’

গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান বলেন, সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গত রাতে বিক্ষোভ করার সময় আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেনের লোকজন হামলা চালিয়েছে দাবি করে আজ শনিবার ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় নাগরিক কমিটি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি অফিসের সামনে রাজবাড়ী মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সবাইকে এই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।