গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে আমদানিনির্ভরতা বাড়বে, চাপে পড়বে অর্থনীতি। গ্যাসের দাম বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্প থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, কিছু ব্যাংককে টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, কারণ ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে। ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখতে টাকা দেয়া হলেও শিল্প টিকিয়ে রাখার দিকে মনোযোগ নেই। ব্যাংক ঋণের সুদ হার ১৮ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি মূলধন অর্ধেক কমে গেছে।
রবিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে ‘পলেসি কন্সিডার ইন এনার্জি অ্যার্ফোডেবিলিটি অ্যান্ড ইমপেক্ট অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপেটিটিভনেস’ সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ, ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার, নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলী হোসাইন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, গত ১৫ বছরের নতুন কূপ খননের জন্য তেমন কিছুই খরচ হয়নি, তৈরি হয়নি নতুন কোনো নীতিমালাও। যা দেশের গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ। বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এলএনজি আমদানির চেয়ে কম খরচে দেশে অনুসন্ধান করা সম্ভব ছিল।
সেমিনারে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, সস্তা গ্যাসের কারণে দেশে শিল্প কারখানা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ব্যাংকে সুদের হার বেশি; এনবিআরেও অন্য সমস্যা আছে। আরেকদিকে গ্যাসের দাম বাড়তি; তারপরও চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছে না সরকার। এ অবস্থায় অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে উদ্যোক্তারা কেউ বিনিয়োগ করবে। বিদ্যমান বিনিয়োগও সম্প্রসারণ হবে না। সার্বিকভাবে দেশে শিল্প থাকবে না। তিনি বলেন, সরকার নতুন শিল্পের জন্য ১৫ শতাংশ এবং সম্প্রসারণ শিল্পের জন্য ৫০ শতাংশ গ্যাস দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এমন পরিকল্পনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ; আমরা আর কেউ শিল্প করতে চাই না। তবে বর্তমান শিল্পকে সহায়তা করবেন না, এটা হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে হলে গ্যাসের দাম বর্তমানের চেয়ে কমানো দরকার। তিনি আরো বলেন, কারখানা চালাবো নাকি এখন এক্সিট করবোÑ সে কথাও কিন্তু আপনাদের ভাবতে হবে।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাসের বর্তমান দাম কমানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করা দরকার। কমিশন খাওয়ায় জন্য স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কিনতে অস্থির ছিল বিগত সরকারের লোকজন। তারা বিদেশে বসে এখনো কমিশন খাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দাম কমানো না গেলে শিল্প থাকবে না। মূলত আমরা ফেঁসে গেছি। রাসেল বলেন, কিছু ব্যাংককে টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, কারণ ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে। ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখতে টাকা দেয়া হলেও শিল্প টিকিয়ে রাখার দিকে মনোযোগ নেই। ব্যাংক ঋণের সুদ হার ১৮ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি মূলধন অর্ধেক কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, দেশে এতগুলো চিনিকল থাকতেও পাকিস্তান থেকে চিনি আমদানি হচ্ছে, এটা লজ্জাজনক; এ আমদানির কারণে কিন্তু কর্মসংস্থান হবে না। প্রতিদিন একটু একটু করে বিপদ বাড়ছে। শওকত আজিজ রাসেল বলেন, সিস্টেম লস কমানোর পাশাপাশি শুল্ক-কর কমিয়ে গ্যাসের দাম কমানো সুযোগ রয়েছে। তা না করে যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে দেশে শিল্পই থাকবে না।
মূল প্রবন্ধে মাসরুর রিয়াজ বলেন, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে, চাপে পড়বে অর্থনীতি। তিনি আরো বলেন, এখনকার চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে উৎপাদনমুখী খাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। কমবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। নতুন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক খাতে নতুন করে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে। ফলে আর্থিক খাতে চাপ পড়বে। আমদানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি লাগবে। মাসরুর রিয়াজ বলেন, আবার গ্যাসের দাম বাড়লে অনেক শিল্প বন্ধ হবে, তখন মন্দ ঋণ বাড়বে।