জামিন নিয়ে আবার জড়াচ্ছে একই অপরাধে : র‌্যাব ডিজি

পুলিশ র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো চুরি ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, কয়েকশ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু তারা আবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে একই ছিনতাই কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে।

সরকারপক্ষের আইনজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আদালতে ছিনতাইকারীদের কার্যকলাপ ও এর ভয়াবহতা, জনজীবনে কি পরিমাণ অশান্তি তৈরি করছে তা তুলে ধরেন, যাতে করে আদালত জামিন দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী টোল প্লাজায় টহল ও চেকপোস্ট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, খুন ও ডাকাতি বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‍্যাব ফোর্সেস কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।

র‍্যাব মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চুরি ডাকাতির মতো অপরাধের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। র‌্যাবের ঢাকার ৫টি ও ঢাকার বাইরের দশটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে আমরা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছি।

ইতোমধ্যে ছিনতাই, দস্যুতা, ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীগামী একটি যাত্রীবাহী নৈশবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। মা-বোনের সম্ভ্রমহানির অভিযোগও আছে। ঢাকা শহরেও অনেকক্ষেত্রে মা-বোনরাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই অপরাধগুলো দমন করার জন্য। রাজশাহীগামী সেই নৈশবাসের ঘটনায় বেশ কয়েকজন দস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আমরা র‌্যাব পুলিশ, অন্যান্য বাহিনীসহ যৌথবাহিনী বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে আমরা গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছি। কবজি কাটা আনোয়ার, জেনেভা ক্যাম্পের দুই গ্রুপের লিডারসহ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও চুরি, ছিনতাই পরিস্থিতিকে এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি নাই। এজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

নগরবাসী ও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে র‌্যাব ডিজি বলেন, আমরা প্রাণান্তকর চেষ্টার মাধ্যমে এই অপরাধগুলো দমনে চেষ্টা করব। সেই ক্ষেত্রে আপনারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। কেউ এই ধরনের অপরাধের শিকার হলে বা সংঘটিত হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করুন। যাতে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে পারি। কোনো সাক্ষ্য, প্রমাণ বা ভিডিও ফুটেজ থাকলে সেগুলোও আমাদের পাঠান। তাহলে আমরা দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।

র‌্যাব সদর দপ্তর জানিয়েছে, সম্প্রতি সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস কায়দায় হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে।

এসব অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে র‌্যাব ফোর্সেসও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে।

র‌্যাবের সকল ব্যাটালিয়নসমূহ তাদের নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট পেট্রলিং পরিচালনা করছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিরতিহীনভাবে অতিরিক্ত টহল মোতায়েনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ব্যাটালিয়নসমূহ নিজস্ব কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।

দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য র‌্যাব বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।

এছাড়াও গত ১০ ফেব্রুয়ারি হতে অপারেশনস্ ডেভিল হান্টের মাধ্যমে র‌্যাব ফোর্সেস রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী, পরিকল্পনাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার জন্য মেট্রোপলিটন এলাকাসহ জেলা পর্যায়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি হতে এখন পর্যন্ত রাজধানী হতে ৪০ জন, ময়মনসিংহ ২৫ জন, রাজশাহী হতে ২৪ জন, সিলেট হতে ১৭ জন, নারায়ণগঞ্জ হতে ১৫ জনসহ সর্বমোট প্রায় ২ শতাধিক (১৮০ জন) আসামিকে গ্রেপ্তার এবং রাজশাহী হতে ১টি ওয়ান শুটার গানসহ ১ রাউন্ড গুলি এবং সিরাজগঞ্জ হতে পরিত্যক্ত ১টি ককটেল সদৃশ বোমা উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এছাড়াও সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।