ডিএসইর পরিচালক পদ থেকে সরে গেলেন মাজেদুর রহমান

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ালেন সংস্থাটির নবনির্বাচিত পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান। এরই মধ্যে তিনি ডিএসইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিজের অপারগতার কথা জানিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন।

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে মাজেদুর রহমান ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা জানিয়ে ডিএসইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অরাগতার প্রকাশ করেন।

এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। ওই দিন কমিশন সভায় ডিএসইতে সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এতে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মালদ্বীপ ইসলামি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান, আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাহিদ হোসেন, সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মফিজুল ইসলাম রাশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক ও সিরডাপের গবেষণা পরিচালক মো. হেলালউদ্দিন, মেটলাইফ বাংলাদেশের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ হাম্মাদুল করীম ও বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসহাক মিয়াকে।

তবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে ডিএসইর মনোমালিন্য বা বিতর্ক তৈরি হয়। কারণ, ডিএসইর মতামত ছাড়াই এককভাবে বিএসইসির পক্ষ থেকে সংস্থাটিতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্‌করণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নির্ধারণের দায়িত্ব সংস্থাটির নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটির (এনআরসি)। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির মৌখিক নির্দেশনায় ডিএসইর গত পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালকেরা পদত্যাগ করেন। এতে এনআরসি কমিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও এ নিয়োগের জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হলেও সেই তালিকা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ কারণে ডিএসইর অংশীদারদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় স্বতন্ত্র পরিচালক পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন কে এ এম মাজেদুর রহমান। যদিও তিনি ব্যক্তিগত কারণেই তাঁর অপরাগতার কথা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মাজেদুর রহমান জানান, ব্যক্তিগত কারণে আমি ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা বিএসইসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি, পুঁজিবাজারের স্বার্থে অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোকদের নিয়ে ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠিত হবে, যাঁরা বাজারের উন্নয়নে কাজ করবেন।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এককভাবে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে এতে আইনগত জটিলতা দেখা দেয়। যার ফলে ১ সেপ্টেম্বর নতুন পর্ষদ গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন পরিচালকেরা দায়িত্ব নিতে পারেননি। এমনকি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পর্ষদও এখনো পুনর্গঠন করা হয়নি। ফলে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় শূন্যতা বিরাজ করছে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক পারস্পরিক সমঝোতা ও আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে এককভাবে ডিএসইর ওপর নতুন পর্ষদ চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি যথাযথ হয়নি। বাজারের স্বার্থেই বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আস্থায় নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কাজ করতে হবে।