তেলের বিনিময়ে ইরানকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে চীন

ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রতিরক্ষা অবকাঠামো পুনর্গঠনে চীন থেকে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল (এসএএম) ব্যাটারি নিয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই (এমইই) একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।

২৪ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই চীনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটারি পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন এক আরব কর্মকর্তা, যিনি এই গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আরেকজন আরব কর্মকর্তা জানান, ইরান কিভাবে তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা “পুনর্গঠন ও শক্তিশালী” করছে তা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও এর আরব মিত্ররা অবগত এবং হোয়াইট হাউসকেও ইরানের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ পারমাণবিক আলোচনা নিয়ে ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান ইরানের

তবে চীন থেকে ঠিক কত সংখ্যক এসএএম ইরান পেয়েছে, তা নিশ্চিত করেননি ওই কর্মকর্তারা। তাদের একজন জানান, ইরান এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বিনিময়ে তেল সরবরাহ করছে।

চীন বর্তমানে ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মার্কিন জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ) মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরান যত অপরিশোধিত তেল ও কনডেনসেট রপ্তানি করে, তার প্রায় ৯০ শতাংশই যায় চীনে।

চীনের প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিগত কয়েক বছর ধরে রেকর্ড পরিমাণ ইরানি তেল আমদানি করে আসছে বেইজিং। মালয়েশিয়ার মতো দেশকে ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে তেলের উৎস আড়াল করা হয়।

এক কর্মকর্তা বলেন, “ইরানিরা খুব সৃজনশীলভাবে বাণিজ্য করে।”

এই অস্ত্র সরবরাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বেইজিং ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। বিশেষ করে এমন সময়ে যখন ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার সময় চীন ও রাশিয়া কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছিল বলে মনে করা হয়।

ইসরায়েল সেই সময় ইরানের আকাশে প্রাধান্য স্থাপন করে। তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করে এবং একাধিক জেনারেল ও বিজ্ঞানীকে টার্গেট করে হত্যা করে।

তবে এসব হামলা সত্ত্বেও ইরানি সরকার টিকে থাকে এবং যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের দিকে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়া অব্যাহত রাখে, যার মধ্যে কয়েকটি তেল আবিব ও হাইফার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে।

উল্লেখ্য, ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে চীন উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে ইরানকে এইচওয়াই-২ সিল্কওয়ার্ম ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করে। সেই মিসাইল ব্যবহার করে ইরান কুয়েত এবং একটি মার্কিন তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা চালায়।

২০১০ সালে গুঞ্জন ওঠে, চীন ইরানকে এইচকিউ-৯ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে। বর্তমানে ইরানের ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০, যা যুদ্ধবিমান, ড্রোন, এমনকি কিছু ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল প্রতিরোধে সক্ষম।

এছাড়া, ইরান তাদের নিজস্ব উৎপাদিত খোরদাদ ও বাভার-৩৭৩ সিরিজের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ব্যবহার করে থাকে। তবে এই সব সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বিশেষ করে ইসরায়েল ব্যবহৃত মার্কিন এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটারের মতো উন্নত বিমান মোকাবিলায়।

চীন বর্তমানে এইচকিউ-৯ ও এইচকিউ-১৬ সিস্টেম পাকিস্তানে রপ্তানি করছে। ধারণা করা হয়, মিসরও এইচকিউ-৯ সিস্টেম পেয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সোমবার তেহরান ও এর পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।

এমইই হোয়াইট হাউসের কাছে এই বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তারা প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ