বয়স বাড়ার সঙ্গে দেহে যেমন নানা পরিবর্তন আসে, তেমনি প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, মনোযোগের অভাব বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এসব সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে। তাই ত্রিশ বছর বয়স পার হওয়ার পর থেকেই নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া খুব জরুরি।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের পাশাপাশি জানতে হবে কোন খাবারগুলো মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। কিছু খাবার ও পানীয় আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন জেনে নিই সেগুলো কী কী—
মাখন, ডালডা ও মার্জারিন
মাখন দিয়ে রান্না করা খাবার সুস্বাদু হলেও এগুলোতে থাকা ট্রান্স ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। কক্ষ তাপমাত্রায় জমে যায় এমন স্নেহজাতীয় পদার্থ রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে রক্তনালিতে ব্লক তৈরি হয়ে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ডালডা ও মার্জারিনও একইভাবে ক্ষতিকর।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন বা অন্য যেকোনো ডিপ ফ্রায়েড খাবার শরীরে প্রদাহ তৈরি করে। এই প্রদাহ মস্তিষ্কের রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফলে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
রেড মিট বা লাল মাংস
লাল মাংস যেমন গরু, খাসি বা ভেড়ার মাংস নিয়মিত খাওয়া হলে রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বেড়ে যায়। এতে মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হতে পারে। মাঝেমধ্যে খেতে চাইলে পরিমাণে কম এবং চর্বি ছাড়া মাংস বেছে নেওয়াই ভালো।
চিনিযুক্ত পানীয়
কোমল পানীয়, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত প্যাকেটজাত জুস বা মিষ্টি চা-কফিতে থাকা অতিরিক্ত চিনি স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ করলে বয়সজনিত মস্তিষ্ক সংকোচনের হার আরও বাড়ে।
কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয়
চিনি এড়িয়ে ডায়েট ড্রিঙ্ক বেছে নিলেও বিপদ এড়ানো যায় না। এসব পানীয়তে ব্যবহৃত কৃত্রিম চিনি (যেমন অ্যাসপারটেম বা সুক্রালোজ) স্মৃতিভ্রান্তি ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অ্যালকোহল
অ্যালকোহল মস্তিষ্কের তথ্য বিশ্লেষণ ও স্মৃতি সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে স্মৃতিভ্রম, মনোযোগহীনতা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয়ের আশঙ্কা বাড়ে। এমনকি স্বল্পমাত্রার অ্যালকোহলও ক্ষতিকর হতে পারে।
বয়স ত্রিশ পার হলেই খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা আনতে হবে। সুস্বাদু হলেও কিছু খাবার ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অভ্যস্ত হোন—আপনার ভবিষ্যৎ মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।