দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০৬, বছরে নতুন রোগী ৫৩ জন

দেশে বর্তমানে প্রতি লাখে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৬ জন। এছাড়াও প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন। মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যান্সারের রোগী। এমনকি দেশে থাকা ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাই বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) দেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহত্তর গবেষণার ফলাফলে এ চিত্র দেখা গেছে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা : জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান। তিনি জানান, ক্যান্সার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। তাই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

তিনি আরও জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এই গবেষণায় প্রতিটি বাড়িতে বিশেষভাবে তৈরি করা ইন্টারনেট ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন সফটওয়্যার করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহণ করা হয়েছে। এক বছর পূর্তিতে একই পরিবারের ফলোআপ পরিদর্শন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়েছে।

ড. মো. খালেকুজ্জামান জানান, ২ লাখ মানুষের ওপর এই গবেষণা পরিচালন করা হয়। বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের রোগী পাওয়া গেছে। প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ৯৩ শতাংশ রোগীর বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ শিশুরা রয়েছে। ৫.১ শতাংশ রোগীর বয়স ৭৫ বছরের বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল শ্বাসনালি, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালির ক্যান্সার। নারীদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি। পুরুষ ক্যান্সার রোগীদের ৭৫.৮ শতাংশ ধুমপায়ী এবং ধোঁয়াহীন পান, জর্দা, তামাক সেবনকারী ৪০.৫ শতাংশ। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৬০.৬ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন পান, জর্দা, তামাক সেবনকারী। ৪৬ শতাংশ রোগীর ক্যান্সারের সঙ্গে ই-তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে।

চিকিৎসা প্রসঙ্গে গবেষণায় আরও জানা গেছে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কম্বাইন্ড চিকিৎসা নিয়েছে এবং ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসাই নেয়নি। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। মৃত রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালি ও পাকস্থলীর ক্যান্সার। প্রতি বছর নতুন করে প্রতি লাখে ৫৩ জন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার ও শ্বাসনালীর ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বেশি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক।