পেশাজীবী নারীদের নেতৃত্বে অগ্রসর হতে সহায়তা করতে অক্সফাম বাংলাদেশ ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘অনির্বাণ-রাইজ অ্যান্ড লিড’ কর্মসূচি চালু করেছে।
কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, দেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়েছে। যা ২০১৬ সালে ছিল ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ বাড়লেও মাঝারি ও উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব আশঙ্কাজনকভাবে কম।
যা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
আজ শনিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।
তিনি বলেন, ‘সামাজিক রীতি, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য ও পরিবারিক দায়িত্বের কারণে ক্যারিয়ারে বিরতির মতো কাঠামোগত বাধাগুলো নারীদের পেশাগত উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ক্যারিয়ার বিরতি কখনোই একজন নারীর সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে পারে না।
কাঠামোবদ্ধ সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আমরা নারীদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারি। যাতে তারা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে নেতৃত্বের জায়গায় অবদান রাখতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের উইমেন’স রিটার্নশিপ প্রগ্রামের প্রকল্প সমন্বয়ক নুসরাত আনোয়ার ও অক্সফাম বাংলাদেশের ইকোনমিক ইনক্লুশন অ্যান্ড জাস্টিস বিভাগের প্রধান বিদোওরা তাহমিন খান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে যৌথভাবে অনির্বাণ রাইজ অ্যান্ড লিড নামক একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
মাঝ-ক্যারিয়ারের নারী পেশাজীবীদের দক্ষতা, অন্তদৃষ্টি ও আত্মবিশ্লেষণমূলক পরামর্শ দিয়ে তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নেতৃত্বের ভূমিকা অর্জনে সহায়তা করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। কর্মসূচিটি ক্যারিয়ার বিরতিতে থাকা নারীদের কর্মজীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া নারীদের ক্যারিয়ার পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য ও নেতৃত্বের পথ সুগম করবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমাইরা আজম বলেন, ‘সফলতা শুধু শিক্ষাগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না। এজন্য প্রয়োজন আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা, মানসিক প্রশিক্ষণ এবং অতিরিক্ত সময়কে কাজে লাগানোর কৌশল।
আপনার জ্ঞান থাকলে আপনি সফল হবেন, তবে সেইসঙ্গে প্রয়োজন জোরালোভাবে কথা বলার আত্মবিশ্বাস, নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা।’
তিনি বলেন, ‘সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। এই পরিবর্তনে পুরুষদের ভূমিকা রাখতে হবে। স্থায়ী পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারীদের বিদ্যমান বাঁধাগুলো ভাঙতে হবে এবং ভেতর থেকে জেগে উঠতে হবে।’
অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘অগ্রগতির পরও অনেক নারী অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, যা তাদের ক্যারিয়ারের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। এখনই সময় এমন কর্মপরিবেশ তৈরি করার, যেখানে বৈচিত্র্যময় নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্য ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের সম্ভাব্য পথগুলো নিয়ে ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স : আধুনিক কর্মক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ নেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস, চেঞ্জ মেকার্সের লিডারশিপ কোচ উমা চ্যাটার্জী, ইনোভিশন কনসাল্টিং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াত সরওয়ার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তা হাসনে আরা বেগম প্রমুখ।