হজরত নূহ আ. তাঁর জাতিকে প্রায় সাড়ে ৯০০ বছর আল্লাহর পথে আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জাতি নবী কথা না শুনে তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। পদে পদে তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সবশেষে নিরাশ হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন নূহ আ.। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে সেই জাতিকে বন্যার পানিতে ডুবিয়ে মারেন।
মুহাম্মদ সা.-এর উম্মত হিসেবে আমরা পূর্ববর্তী সব নবীকে সত্য মনে করি এবং তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা যেই তাওহীদের বাণী প্রচার করেছেন তা বিশ্বাস করি। তাঁদের জীবনী থেকে উত্তম বিষয়গুলো উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যও শিক্ষণীয়। এখানে নূহ আ.-এর জীবনী থেকে কয়েকটি শিক্ষা তুলে ধরা হলো—
১. নূহ আ. দীর্ঘকাল ধরে নিজ জাতির কাছে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করেছেন। তবে এরপরও তিনি তাদের হেদায়াতের ব্যাপারে নিরাশ হননি, প্রকৃত সমাজ হিতৈষী আলেম ও নেতাদেরও তেমনি নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
২. নবী পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ঈমান না থাকার কারণে নূহ আ.-এর স্ত্রী ও পুত্র যেমন আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি লাভে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি এ যুগেও হওয়া সম্ভব। কাফির ও মুশরিক সন্তান বা কোনো নিকটাত্মীয়ের মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর নিকটে দোয়া করা জায়েয নয়।
৩. ঈমানী সম্পদই বড় সম্পদ। আল্লাহর কাছে ঈমানদারের মর্যাদা সবথেকে বেশী। যদিও সে দুনিয়াবী জীবনে দীনহীন গরীব হয়।
৪. ঈমানহীন সমাজ নেতা ও ধনী লোকদের খুশী করার জন্য ঈমানদার গরীবদের দূরে সরিয়ে দেওয়া যাবে না।
৫. মৃত নেককার মানুষের অসীলায় পরকালে মুক্তি পাওয়ার ধারণার ভিত্তিতে সৃষ্ট মূর্তিপূজার শিরক বিশ্ব ইতিহাসের প্রাচীনতম শিরক। এই শিরকের কারণেই নূহ আ.-এর জাতি আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়েছিল। তাই সব ধরনের শিরক থেকে তওবা করা কর্তব্য।
৬. সমাজ নেতাদের পথভ্রষ্টতার কারণেই দেশে আল্লাহর গজব নেমে আসে। অতএব তাদেরকেই সবার আগে হুঁশিয়ার হওয়া কর্তব্য।
৭. বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সাথে সাথে সাধ্যমত বাস্তব প্রচেষ্টা চালাতে হয়। যেমন নূহ আ. প্রথমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। তারপর গজব থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর হুকুমে নৌকা তৈরি করেন।
৮. আল্লাহ তায়ালা ওহীর দিয়ে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন শিল্পকর্মের সূচনা করেছেন, যেমন আদম আ.-এর মাধ্যমে কৃষিকর্ম ও চাকার প্রচলন করেছেন এবং নূহ আ.-এর মাধ্যমে জাহাজ শিল্পের সূচনা করেছেন।
৯. আল্লাহ নিজের নেককার বান্দাদের পক্ষে তাদের শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ নিয়ে থাকেন এবং নেক বান্দাদের মুক্ত করেন। যেমন নূহ আ.-এর শত্রুদের থেকে আল্লাহ বদলা নিয়েছিলেন এবং নূহ আ. ও তাঁর ঈমানদার সাথীদের মুক্ত করেছিলেন।
১০. নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারী সমাজ সংষ্কারকগণ সমাজের গালমন্দ খেয়েও সমাজ ত্যাগ করেন না। কিন্তু তাঁরা দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অভিযোগ জানালে আল্লাহর গজব নেমে আসে।