পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ নং ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ

রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২নং ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন দুই মাসের জন্য বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ১০ নভেম্বর রোববার গভীর রাত থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ইউনিটটি চালু হলে পুরোদমে উৎপাদনে ফিরবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই সময়টিকে বেছে নিয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এতে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না বলে জানিয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে পুরোদমে উৎপাদনে আসে ২০২০ সালে। বিদ্যুৎ খাতে নানা টানাপোড়েন ও দেশে যাতে বিদ্যুতের ঘাটতি না হয় সে জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটই বিরতিহীনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল। তবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সব যন্ত্রেরই বিরাম, ছোটখাটো মেরামতসহ রক্ষণাবেক্ষণ দরকার হয়। না হলে এগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু দেশের চাহিদার বিষয় বিবেচনায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিটই উৎপাদন অব্যাহত রাখায় বর্তমানে এর রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি হয়ে পড়ে। তাই মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে গত ১০ নভেম্বর গভীর রাত থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ করা হয়। এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করতে অন্তত দুই মাস লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মাধ্যমে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে প্রথম ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদ বলেন, আমরা আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে মেইনটেনেন্সের যে কার্যক্রমগুলো রয়েছে সেগুলো শেষ করে এই ইউনিটটি উৎপাদনে ফিরে আসবে। আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হলেও বাংলাদেশে আরও পাঁচটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে এবং গ্যাস ও অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এই চাহিদা মিটাপ করতে পারবে। যেহেতু শীত পড়ে গেছে, সেহেতু বিদ্যুতের ডিমান্ড অনেক কমে গেছে।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মওলা জানান, মেরামতের প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় এই সময়টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে এর পরও ঘাটতি দেখা দিলে অন্য কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে চুক্তির মধ্যেই এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করায় বাড়তি কোনো খরচ হবে না।

২০১৪ সালে বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সাল থেকে এটি উৎপাদনে যায়। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।