সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। আলুর কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, দেশী পেঁয়াজের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা। এভাবে প্রতিটি পণ্যের দামই এখন আকাশছোঁয়া।
দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অতি মুনাফার লোভের কারণেই এভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে। আর এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। বাজারে নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বাজার মনিটরিং বাড়ানোসহ মোট ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে ক্যাবের নেতারা এসব কথা বলেন। এ সময় ক্যাব নেতারা অসাধু ও দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়াও ক্যাব নেতারা পণ্যমূল্য কমাতে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে-নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা, বাজার মনিটরিং জোরদার করা, টিসিবির ট্রাক সেল বাড়ানো, টাসিবির ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা বাড়িয়ে দেড় কোটি করা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শওকত আলী খান, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
বাজারে মনিটরিংয়ের নামে যা হয় তা যথেষ্ট নয় মন্তব্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাজার সংস্কার কমিটি করে দিলে বিনা পয়সায় কাজ করে বিকল্প প্রস্তাবনা হাজির করবো। প্রিন্স বলেন, আগে বলা হত উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে দামও বেশি। কিন্তু এখন কেন আবার দাম বাড়ছে? সব সংস্কার কমিটি হলো, বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য কমিটি করা হলো না কেন?
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাজার সংস্কার কমিটি করে দেন। আমরা কাজ করতে রাজি আছি। বিনা পয়সায় কাজ করে বিকল্প প্রস্তাবনা হাজির করব। আহামরি কাজ করতে হবে না। বাজার কিছু কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের নামে যা হয় তা যথেষ্ট নয়।
বাজার মনিটরিংয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তিনি দাবি করেন, আমদানি পণ্যের সিন্ডিকেট কমাতে হবে। বাজারে পণ্যের দাম কমাতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। সার, কিটনাশকের দাম কমাতে হবে। বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে। উৎপাদক সমবায় করতে হবে। মধ্যসত্বভোগী কমাতে হবে। চাঁদাবাজ কমাতে হবে।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা, অথচ বেড়েছে। আলুর দামও কমছে না। অতিলোভের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে দাম। ড্রামের তেলের জন্য সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। খোলা তেল বিক্রি বন্ধে আইন বাস্তবায়ন হয়নি। শাস্তির বিধান না থাকায় আইন কার্যকর হচ্ছে না। আইন ঠিকঠাক প্রয়োগ হচ্ছে না। পানির দাম নিয়ে মামলা করেও কোনো ব্যবসায়ীর শাস্তি হয়নি। পানি ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। করপোরেট ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়ায়।
অভ্যুত্থানের ফলাফল নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভোক্তাকে কম দামে দেয়ার কন্য কোনো কমিশিন হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিশনের দাবি করছি। বাজারে গিয়ে দেখেন, মানুষ আপনাদের কী বলে। আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে আসেন, দেখেন কবর পর্যন্ত দখল হয়ে যাচ্ছে। একটা গ্রুপ দখলদারি করে যাচ্ছে।
‘শুল্ক কমানোর ফল নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে বলব, আপনার বডির মাঝে অনেক লোক আছে পতিত সরকারের। তারা কাজ করছে না। জরিমানার টাকা ভোক্তার কাছ থেকেই ব্যবসায়ীরা তুলে নেয়। অভিযানের পর আবার আগের দামেই পণ্য বিক্রি হয়’, যোগ করেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে এমন চড়া দামে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। বিপুল আলু হিমাগারে মজুদ থাকায় ও আমদানি জটিলতার কারণে এবার আলুর দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। অবশ্য দাম নিয়ন্ত্রণে বা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নেই যথাযথ তদারকি। হিমাগার পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় আলুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে আলুর মতো নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা পেঁয়াজের দামও এখনও কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা।
মানবন্ধনে উপস্থিত ক্যাব নেতারা বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।
এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। সেগুলো হচ্ছেÑ
অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। টিসিবির ট্রাক সেল বাড়াতে হবে। ভোজ্য তেল খোলা বাজারে যারা বিক্রি করছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
সরকার ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে এর সংখ্যা দেড় কোটি করতে হবে। বাজারে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাজার অভিযান বা মনিটরিং বাড়াতে হবে।