ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কোর্স বাদ দেয়ার একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমডিদের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামুলক রেখেই জিএম পদে পরিক্ষা নিচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার পরে অনেক কিছুই পট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু উল্টোচিত্র ব্যাংক খাতে। সাড়ে তিন মাসেও তেমন কোনো কিছুই পবির্তন হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতিমালায় চলছে ব্যাংক খাত। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জিএম পদে পদোন্নতিতে পরিক্ষা নিচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের করা নীতিমালা। সেখানে জিএম পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক ছিলো।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য ছিল। প্রথমটি হলো, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন। সেখানে আওয়ামী লীগের নীতিমালা অনুসরণ করা ঠিক হবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জিএম পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাদ দিয়ে পরিক্ষা নেয়া উচিত। কারণ আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগীরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এখন তার খেসারত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। খেসারত দিচ্ছে ব্যাংকের গ্রাহকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর নিয়োগের সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হতে চলছে। কিন্তু এখনও ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরেনি। অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে প্রয়োজন মতো টাকা তুলতে পারছেন না। নিজের টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে না পারায় গ্রাহকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংকটে থাকা দেশের ব্যাংক খাতে নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সরকার পতনের পর এই খাতে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এমনকি আন্দোলন-বিক্ষোভ গোলাগুলিতে গড়িয়েছে। এমন অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন আমানতকারীরা। এরমধ্য কিছু কিছু ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দিয়েছে গ্রাহকরা।
গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনিয়র অফিসার ও তার ওপরের পদে পদোন্নতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই দুই পর্বের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ব্যাংক খাতকে বিভিন্ন ধ্বংস করেছে। আসল লোকগুলোকে ব্যাংকের বাহিরে রেখেছে। আর চাটুকর ও ধান্ধাবাজাদের ব্যাংকের আশেপাশে রেখেছে। ফলে সেই ধান্ধাবাজ লোকগুলোই বিভিন্ন সময় পদোন্নতি ও বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছে। আমরা বঞ্চিতরা আগে বঞ্চিত ছিলাম। এখন বঞ্চিত হচ্ছি। গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নীতিমালায় চলছে ব্যাংক খাত। সেখানে আমরা বঞ্চিতরা আবার পিছিয়ে পড়ছি। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এখন জিএম পদে পরিক্ষা নেয়া হচ্ছে। সেখানে যাদের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা রয়েছে, তাদেরকেই ডাকা হচ্ছে। অথছো গত ১৬ বছর আমরা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সেখানে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কোর্স করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই অন্তর্বর্তী কালিন সরকারকে অনুরোধ জানাবো আওয়ামী লীগের নীতিমালা বাদ দিয়ে জিএম পদে পরিক্ষা নিতে। তা না হলে আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগীরাই বেশি সুবিধা পাবে।