ব্যাংকে টাকা রাখার আগে যেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই জরুরি

নিশ্চিন্তভাবে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার আগে কিছু বিষয়ে যাচাই-বাছাই জরুরি। না হয় ঝামেলায় পড়তে হতে পারে গ্রাহককে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে যে সুদ মিলত, কয়েক বছর আগেও তা দিয়ে হিসাব পরিচালনার খরচই ঠিকমতো উঠত না। মূল্যস্ফীতি তখন এতটাই বেশি ছিল যে ব্যাংকে রাখা অর্থের প্রকৃত মূল্য কমে যেত। সুদের হার মূল্যস্ফীতির নিচে থাকায় আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাংক বিমুখতা তৈরি হয়। 

এর মূল কারণ কী? এ বিষয়ে তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত সুদহারের সীমা, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। ঋণের সুদহার বেঁধে রাখার ফলে আমানতের ওপরও সুদ কমে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই সীমা তুলে নেওয়ায় পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুনঃ ঢাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কিছু বুথ ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে

বর্তমানে অনেক ব্যাংক সঞ্চয়পত্র বা সরকারি বন্ডের চেয়েও বেশি সুদ দিচ্ছে। এতে করে ব্যাংক আবার সাধারণ মানুষের জন্য আস্থার জায়গা হয়ে উঠছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান সুদের হার নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়।

যেসব ব্যাংকে টাকা রাখলে দ্রুত দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে:

এক্সিম ব্যাংক: ৫ বছর ৪ মাসে; এবি, প্রিমিয়ার ও ন্যাশনাল ব্যাংক: সাড়ে ৫ বছরে; রূপালী ব্যাংক: ৬ বছর ৯ মাসে, জনতা ব্যাংক: সাড়ে ৬ বছরে, ইউসিবি: ৬ বছর ৯ মাসে, এনসিসি ব্যাংক: ৬ বছর ১১ মাসে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও ট্রাস্ট ব্যাংক: ৭ বছর ৩ মাসে, সিটি ব্যাংক: ৯ বছরে।

কিছু ব্যাংক এখন এমন আমানত স্কিম চালু করছে, যেখানে মাসিক জমার ভিত্তিতে মেয়াদ শেষে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে।

তবে শুধু বেশি সুদের মোহে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে দুর্বল বা তারল্য-সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোই বেশি সুদ দিয়ে আমানত টানার চেষ্টা করে।

বিনিয়োগের আগে যা দেখবেন
১. মেয়াদি শর্ত ভালোভাবে পড়ুন: মেয়াদের আগে টাকা তুললে জরিমানা হতে পারে, কিংবা সুদ কমে যেতে পারে।
২. মূল্যস্ফীতির বিপরীতে বিশ্লেষণ করুন: সুদ ১২% হলেও মূল্যস্ফীতি যদি ১০% হয়, প্রকৃত মুনাফা হয়তো ২%-এর বেশি নয়।
৩. ব্যাংকের আর্থিক অবস্থান যাচাই করুন: খেলাপি ঋণের হার, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ও শেয়ারবাজারে পারফরম্যান্স দেখে সিদ্ধান্ত নিন।
৪. জরুরি ঋণ সুবিধা আছে কি না দেখুন: কিছু ব্যাংক স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে।
৫. কর বিবেচনায় রাখুন: সুদের আয়ে উৎসে কর কাটা হয়—এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাচাই করে। সুদের হার ছাড়াও ব্যাংকের স্থিতিশীলতা, আর্থিক অবস্থান ও সুনাম বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমান সময়ে ব্যাংকে আমানত রাখাকে কেউ কেউ ‘সুবর্ণ সুযোগ’ বললেও, বেশি সুদের লোভে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিও হতে পারে। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকে বিনিয়োগ করলে তা ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ