ভোরের কাগজের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বনি স্লোগানে এগিয়ে যাওয়া ভোরের কাগজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির এক সপ্তাহ পর ব্যাখ্যা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজের পেডে বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই ব্যাখ্যা দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ভোরের কাগজ বন্ধ হয়নি। আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। বিশেষ মহলের পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে ভোরের কাগজের কর্তৃত্ব দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা রুখতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রয়েছে। ‘ভোরের কাগজ লাইভ’ যথারীতি চলছে।

ভোরের কাগজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই দুঃসময়ে দেশে ও দেশের সীমানার বাইরে অবস্থানরত আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রেরণা ও সমর্থন একান্ত প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় ভোরের কাগজ নতুন আঙ্গিকে আরো সমৃদ্ধ হয়ে পৌঁছে যাবে আপনাদের দোরগোড়ায়- এমন প্রত্যাশার কথাও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

পাঠকদের উদ্দেশ্যে পুরো বিবৃতিটি তুলে ধরা হয়েছে-
ভোরের কাগজ দেশের একটি বহুল প্রচারিত ঐতিহ্যবাহী দৈনিক। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মী অযৌক্তিক ও অবাস্তব দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনের নামে প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। ভোরের কাগজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৩৩ বছরে কখনই এ ধরনের দাবি উত্থাপিত হয়নি। এ বিষয়ে ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে:
১. বিশেষ একটি মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ভোরের কাগজের কর্তৃত্ব দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে ভোরের কাগজের কর্মীদের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করছে ও সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে।
২. আমরা সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানাতে চাই, ভোরের কাগজ বন্ধ হয়নি। পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে শুধু প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। ছাপাখানা ও অনলাইন বিভাগসহ (ভোরের কাগজ ডটকম) অন্যান্য কার্যালয় ও ক্যাম্প অফিস চালু রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় ভোরের কাগজের নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি।

৩. আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আইনসঙ্গত ও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার নীতি পোষণ করে না। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত বরাবরই সব পর্যায়ের কর্মীর আইনসঙ্গত ও ন্যায্য বেতনভাতা পরিশোধ করে আসছে। ভবিষ্যতেও পরিশোধে বদ্ধপরিকর। তা সত্ত্বেও কর্মীদের বিভ্রান্ত অংশটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। বহিরাগত কিছু  লোককে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্যে ও স্পষ্ট ভাষায় নানারকম হুমকি দিচ্ছেন।
৪. এই প্রেক্ষাপটে ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা তথা জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।  

৫. প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৬ ধারা অনুযায়ী কিছু কর্মীর চাকরি অবসান (টার্মিনেশন) করা হয়েছে । গত ২০ জানুয়ারি গৃহীত এই সিদ্ধান্ত অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিজ নিজ ঠিকানায় রেজিঃ ডাকযোগে চিঠি দিয়ে ও ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। শ্রম আইনের ২৬ ধারা মোতাবেক চাকরি অবসায়নকৃত কর্মীদের যাবতীয় পাওনাদি যথাসময়ে গ্রহণ করার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

৬. ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করছে যে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানের শত শত কর্মীর রুটি-রুজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ঐতিহ্যবাহী ও পাঠকপ্রিয় দৈনিক ভোরের কাগজ ধ্বংস বা দখলের কোনো ষড়যন্ত্র/অপচেষ্টা সফল হবে না। সেই সঙ্গে ভোরের কাগজ পরিবারের সব সদস্যকে বিভ্রান্ত না হয়ে বা কারো উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। 

৭. বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা শুধু প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই থেমে থাকেননি; তারা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশক, সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক, বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক ও হিসাব বিভাগের প্রধানসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। তারা উল্লিখিত কর্মকর্তাদের নাম ও পদবী উল্লেখ করে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। গত ২৬ জানুয়ারি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিনের বাসার সামনে জড়ো হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও হুমকি দেন। এতে স্থানীয় বাসিন্দারাও বিড়ম্বনার শিকার হন। 

৮. আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এভাবে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ষড়যন্ত্র ও সহিংসতার পথ পরিহার করে প্রয়োজনবোধে দেশে প্রচলিত শ্রম আইন ও আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। বর্তমানে তারা যে আচরণ করছেন তা কারো কাম্য হতে পারে না। 

৯. ভোরের কাগজ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শীর্ষস্থানীয় দৈনিক। দেশের অনেক গুণী সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখকের বিকাশ এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই হয়েছে। সারাদেশে ও দেশের সীমানার বাইরে আমাদের অসংখ্য পাঠক, লেখক ও শুভাকাঙ্ক্ষী ছড়িয়ে রয়েছেন। বর্তমানে ভোরের কাগজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের আমাদের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের সবার প্রেরণা ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়াব, নতুন আঙ্গিকে আরো সমৃদ্ধ হয়ে পৌঁছে যাব সব পাঠকের হাতে।