মুখ খুললেন শরীয়তপুরের ডিসি ও সেই নারী

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ঘিরে ভাইরাল হওয়া আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও নিয়ে এবার দুপক্ষ থেকেই বিস্ফোরক অভিযোগ আসছে। ভিডিওতে দেখা নারীর পরিচয়, পারিবারিক সম্পর্ক, এবং আস্থার জায়গা থেকে গড়ে ওঠা সম্পর্ক সব মিলিয়ে ঘটনাটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও চারটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই শরীয়তপুরজুড়ে তুমুল আলোচনার জন্ম নেয়।

জানা গেছে, ভিডিওতে থাকা নারী টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা সেলিনা ইসলাম লিজা (৩৬)। তিনি ঢাকা মিরপুরের মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের স্ত্রী ছিলেন। পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়া এই দম্পতির ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন হীরা, লিজার স্বামীর বড় বোনের জামাই।

পারিবারিক আত্মীয়তার সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
সেলিনা ইসলাম লিজা দাবি করে বলেন, ‘পারিবারিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পবিত্র কোরআন শরিফে হাত রেখে আমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তার কথা বিশ্বাস করে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সে যেতে বাধ্য হই।

তিনি আরো বলেন, ‘পরে তিনি (আশরাফ উদ্দিন) তার স্ত্রীর সঙ্গে আর্থিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তখন আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আমাকে পাত্তা না দিয়ে, উল্টো বলছেন আমি তাকে ব্লাকমেইল করছি। অথচ তার পারিবারিক সমস্যা সামাল দিতে তিনি নিজেই আমাকে ব্যবহার করেছেন। আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন (হীরা) শুক্রবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমকে জানান, লিজা তার আত্মীয় এবং পারিবারিক যোগাযোগ থেকেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে ওই নারী তাকে ঘনিষ্ঠ করে নানা সময়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন এবং পরে ব্লাকমেইল শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে আমাকে টাকা দিতে হতো। বিভিন্ন সময়ে টাকা পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, যার ডকুমেন্ট আমার কাছে রয়েছে। শেষমেশ তিনি আমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেন এবং বিয়েতে রাজি না হলে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেন।’

শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের এক আইনজীবী নাম প্রকাশে অনিচ্ছু বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে গত দুই মাস ধরে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিলাম। আমি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু নারী পক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন এবং ৩০ জুনের মধ্যে তা পরিশোধের সময়সীমা দেন। এর মাঝেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে।’

প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ও নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই ঘটনার ওই নারীর সাথে কথা কাটাকাটির পর বৃহস্পতিবার রাতেই আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুর ত্যাগ করেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তবে তার অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব পালন করছেন, তার কোনো অফিসিয়াল তথ্য মেলেনি।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ