ইউক্রেন বলেছে, তারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানকার দ্বিতীয় আরেকটি কৌশলগত সেতু ধ্বংস করেছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার ইউক্রেনের সেনারা সেতু ধ্বংসের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। এই সেতুটি কুরস্ক অঞ্চলের জভানোয়ের সেম নদীর ওপরে ছিল বলে জানা গেছে। তবে কখন এই হামলা হয়েছে তা জানা যায়নি।
এর কয়েক ঘণ্টা পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কুরস্কে সামরিক অনুপ্রবেশ ও হামলার পেছনে যেসব লক্ষ্য রয়েছে, তার মধ্যে (ইউক্রেনে) রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধ করার জন্য একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করার লক্ষ্যও রয়েছে।
গত ৬ আগস্ট রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে হঠাৎ করেই অভিযান শুরু করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিয়েভের দাবি, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৮২টি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা যুদ্ধে এই প্রথম রাশিয়ায় প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকোলা ওলেশুক রুশ সেতুতে হামলার ফুটেজসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘আরও একটি সেতু ধ্বংস করা হয়েছে।’
জেনারেল ওলেশুক আরও বলেছেন: ‘ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী অবিরত সূক্ষ্ম বিমান হামলার মাধ্যমে শত্রুদের লজিস্টিক সক্ষমতা থেকে ধ্বংস করে চলেছে, যা যুদ্ধের গতিপথকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে।’
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সেতুটির ওপর ধোঁয়ার একটি বড় কুণ্ডলী। তবে কখন এই হামলা হয়েছে তা জানা যায়নি।
এর আগে এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন গ্লুশকোভো শহরের কাছে সেম নদীর ওপর আরেকটি সেতু ধ্বংস করে। এই সেতুটি সৈন্য সরবরাহের জন্য ব্যবহার করছিল রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় ঢুকে পড়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে- তারা সেখানে থাকার পরিকল্পনা করছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত শনিবার বলেন, তার সৈন্যরা কুরস্কে অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে এবং রাশিয়ায় আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন: ‘কুরস্ক অঞ্চলে আমাদের অভিযান রাশিয়ান সেনাবাহিনী এবং রাশিয়ান রাষ্ট্র, তাদের প্রতিরক্ষা শিল্প এবং তাদের অর্থনীতির ক্ষতি করছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি ইউক্রেনের জন্য কেবল প্রতিরক্ষার চেয়েও বেশি কিছু’ এবং বলেন, তাদের লক্ষ্য ‘যতটা সম্ভব রাশিয়ান যুদ্ধের সম্ভাবনা ধ্বংস করা এবং সর্বাধিক পাল্টা আক্রমণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া’।
ইউক্রেনে আরও রুশ আক্রমণ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে তিনি যোগ করেন, ‘দখলকৃত অঞ্চলে একটি বাফার জোন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক গত শুক্রবার বলেছিলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ড দখল করতে চায় না। রাশিয়ায় তাদের অনুপ্রবেশের মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো মস্কোকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা।’
মস্কো অনুপ্রবেশকে একটি বড় উসকানি বলে অভিহিত করেছে এবং ‘যোগ্য প্রতিক্রিয়া’ দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়ার মাটিতে বিদেশি সেনা আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।