কেপিআই বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাদে গ্রাম ও শহরের সব জায়গায় সমান লোডশেডিং দেওয়া হবে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, লোডশেডিং করতে হলে প্রথমে আমার বাসাতে করতে হবে। আমরা একই নীতি অনুসরণ করবো। গ্রাম উপেক্ষা করে শহর লোডশেডিংমুক্ত করার এই কৌশল আমরা করবো না।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি কোনো কারণে লোডশেডিং করতে বাধ্য হই তাতে আমরা আগেই জানিয়ে দেবো যে এখানে লোডশেডিং হবে। আর একটা ব্যাপার- লোডশেডিং করতে আমরা যদি বাধ্য হই প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সে ক্ষেত্রে আমরা শহর এবং গ্রামের মধ্যে পার্থক্য করবো না। আমরা কেপিআইগুলো বাদে হাসপাতাল এসব জিনিস বাদ দিয়ে অন্যসব জায়গাতে সমানভাবে লোডশেডিং করবো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন গতবারের আগের বার আমি যখন বিদ্যুৎ সচিব ছিলাম, তখন আমি বলেছিলাম লোডশেডিং করতে হলে প্রথমে আমার বাসাতে লোডশেডিং করতে হবে। আমরা একই নীতি অনুসরণ করবো। আমরা গ্রাম উপেক্ষা করে শহরে লোডশেডিংমুক্ত এই কৌশল করবো না। এই ব্যাপারে আমরা আপনাদের কাছে সহযোগিতা চায়। আপনারা জানেন কিছু কিছু জায়গায় লোডশেডিং করা যায় না।
তাহলে এবার লোডশেডিং হলে আপনার বাসা থেকেই আগে শুরু হবে? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ইনশা আল্লাহ, ইনশা
আল্লাহ, ইনশা আল্লাহ।
গ্যাস সমস্যা নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিসিরা বলেছেন- বেগমগঞ্জে যেখানে গ্যাস পাওয়া গেছে, সেখানে তাদের দাবি হচ্ছে স্থানীয়ভাবে গ্যাস দেওয়ার। কিন্তু আমরাতো কোথাও বাসাবাড়িতে এখন গ্যাস সংযোগ দিচ্ছি না, সুতরাং এটা সম্ভব না।
ফাওজুল কবির খান বলেন, গ্যাসের ব্যাপারে কয়েকটা জিনিসতো আমরা করছি সেটা আপনারা জানেন। এক হচ্ছে গ্যাস ক্ষেত্রের কূপ খনন করা শুরু হয়েছে এবং আমরা অল্প অল্প করে ৫০-৬০ এমএমসি পাচ্ছি। আর একটা গ্যাসের অবৈধ সংযোগগুলো আমরা বিচ্ছিন্ন করছি। এটার পরিমাণও বেশ বড়, ২০০ কিংবা ৩০০ এমএসসি’র মতো গ্যাস চুরি হয়। বাসাবাড়িতেও অনেকগুলো বেআইনি লাইন আছে, সেগুলো আমরা কাটতে চাই।
তিনি বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আমরা একটা সভা করেছি, যাতে আমরা এলএনজি ও কয়লা আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার সাহায্য পায়। সে জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মিটিং হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের জন্য রমজান মাসে বাড়তি গ্যাস দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি বিভাগ থেকে আমরা ব্যবস্থা করেছি রমজানের মধ্যে একটু বেশি গ্যাস দেওয়া হবে। ১২০০ এমএমসি দেওয়া হবে, আগে যেখানে সাড়ে ৮০০, ৯০০ দেওয়া হতো। রোজার পরও এটা ১১০০ এমএমসি থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটির অভাব নেই। আমরা ট্যারিফ রি-নেগোসিয়েশন শুরু করেছি। কারণ আপনারা জানেন আমাদের অতি উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ কত হওয়া উচিত, সে জন্য একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছি এবং এটা ব্যবহার করে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করি। একইভাবে আমরা গ্যাসের জন্য একই স্ট্যান্ডার্ড সেট করবো। জ্বালানি তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একই স্ট্যান্ডার্ড সেট করবো। একটা বাড়তি সার্ভিস চার্জ দেওয়া হতো ৯ শতাংশের মতো, সেটা কমিয়ে ৮ শতাংশ করে দিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সাসটেইনেবল বেসিসের মধ্যে নিয়ে আসতে চাই, যাতে অন্তত সামনে যারা সরকারে আসবে তাদের আমাদের মতো দুর্ভোগ পোহাতে না হয়।
হবিগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টের সক্ষমতার চেয়ে কম ব্যবহার করা হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এটা অনেক ক্ষেত্রেই এর কারণ হচ্ছে আমরা গ্যাস দিতে পারছি। আশুগঞ্জে, ঘোড়াশালে সব জায়গায় গ্যাস স্বল্পতার কারণে আমরা সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছি না।