শারজাহতে ইতিহাস গড়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইতিহাসটা বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না কখনোই। এর আগে খেলা সব ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই হারের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও অনেকটা এগিয়ে থেকে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে হারতে হয় বাংলাদেশকে। তবে এবারে আর ভুল হয়নি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটায় শেষ হাসি বাংলাদেশের।

ব্যাট হাতে নাজমুল শান্ত, জাকের আলী অনিকের পর বল হাতে দারুণ পারফর্ম করে ৬৮ রানের জয় তুলে নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তাতে শারজাহ স্টেডিয়ামে প্রথম জয়ের পাশাপাশি তিন ম্যাচের সিরিজেও সমতায় ফিরেছে দল। দুই ম্যাচ শেষে আছে ১-১ সমতা। ১১ তারিখের ম্যাচটায় হবে সিরিজ নির্ধারণ।

শারজাহর তুলনামূলক ধীরগতির উইকেটে বাংলাদেশের স্কোরটা ছিল বেশ চলনসই। স্কোরবোর্ডে ২৫২ রানের জুটি থেকে নির্ভার হওয়ার সুযোগ ছিল। চতুর্থ ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে সেই ইঙ্গিতটাও দিয়ে রেখেছিলেন তাসকিন আহমেদ। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে গুরবাজ ক্যাচ দেন স্লিপে থাকা সৌম্যর হাতে। এরপরেই বাংলাদেশ ভক্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিলেন সেদিকুল্লাহ আতাল এবং রহমত শাহ।

মাঝে জাকের আলী অনিক স্ট্যাম্পের পেছনে স্ট্যাম্পিং এবং ক্যাচ দুইই ছেড়েছেন। ৫২ রানের সেই জুটি ভেঙেছেন নাসুম আহমেদ। মিরাজ নিয়েছিলেন দারুণ এক ক্যাচ। অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী আর রহমত শাহর পরের জুটি ৪৩ রানের। তখনো আফগানিস্তানের হাতেই ছিল ম্যাচ।

যদিও দৃশ্যপট বদল হতে সময় লাগলো না খুব একটা। একটা উইকেট যেন অদৃশ্য সুতো হয়ে টান দিলো আরও দুই উইকেটকে। ১১৮ রানে হাসমতউল্লাহ আউটের পরেই নাসুমের ওভারে আফগানিস্তান হারালো আরও দুই উইকেট। ১১৮ রানে ২ উইকেট থেকে ১১৯ রানে ৫ উইকেট। বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে সেখানেই।

মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ নিয়েছিলেন শরীফুল ইসলাম। হাশমতউল্লাহ চেয়েছিলেন বিগ শট খেলতে। কিন্তু ফাইন লেগে একেবারেই বাউন্ডারি লাইনে থাকা শরিফুলের হাতে জমা পড়ে ক্যাচ ক্যাচ। মোস্তাফিজ উইকেট পেয়েছিলেন পঞ্চম বলে। নাসুমের করা পরের ওভারে রহমত শাহ ১ রান নেন। এর পরের বলেই আজমতউল্লাহকে আউট করেন নাসুম।

সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন আজমতউল্লাহ। দুই বল বিরতি দিয়েই হাস্যকর রানআউট ফিফটি করা রহমত শাহ। ভুল বুঝাবুঝিতে দুই ব্যাটারই চলে যান অপরপ্রান্তে। জাকির বল ঠাণ্ডা মাথায় পাঠালেন এই প্রান্তে থাকা নাসুমের হাতে। ৬ বলের মাথায় নিজেদের তৃতীয় উইকেট পেল বাংলাদেশ। তবে ক্রিজে আগে গিয়েছিলেন গুলবাদিন। আউট হতে হয় রহমত শাহকে।

গুলবাদিন বিধ্বংসী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শরীফুলের ওভারে তিন বলে এসেছিল ১২ রান। পরের বলেই অবশ্য শরিফুলের বুদ্ধিদীপ্ত চালে ক্যাচ দিলেন তাওহীদ হৃদয়কে। পরের ওভারেই মিরাজের দারুণ সুইংয়ে পরাস্ত মোহাম্মদ নবী। সরাসরি বোল্ডে ফিরতে হলো তাকে। রশিদ খানকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। চিরচেনা স্লোয়ারে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন আফগান অলরাউন্ডারকে। আর শেষ উইকেট গিয়েছে নাসুমের ঝুলিতেই। আল্লাহ গাজানফারকে বোল্ড করে ৬৮ রানের জয় নিশ্চিত করেন এই স্পিনার।

এর আগে শারজাহতে এদিন টসে জিতেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুটা খানিক ধীরগতির হলেও এদিন শুরু থেকেই শক্ত ভিত করেছিল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। তানজিদ তামিম ২২ রানে ফিরলেও সৌম্য সরকার আর নাজমুল শান্তর জুটি থেকে আসে ৭১ রান। সৌম্য ৩৫ রানে ফিরলেও ফিফটি ঠিকই তুলে নেন অধিনায়ক শান্ত। তৃতীয় উইকেটে তাকে সঙ্গ দিয়ে ৫১ রানের জুটি করেছিলেন মিরাজ।

যদিও এদিন আরেকবার ব্যাটিং ধস নেমেছিল বাংলাদেশের ইনিংসে। ১৭৪ রানে ৩ উইকেট থেকে ১৮৪ রানে ৬ উইকেট হতে সময় লাগেনি। নানগালিয়ে খারোতের তিন আঘাতে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের মিডলঅর্ডার। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ৭৬ রানের পরেও সেই সময় কিছুটা বিবর্ণই ছিল বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড। এরপরেই আসে জাকের আলী অনিক এবং নাসুম আহমেদের দুই ক্যামিও।

এক চার এবং দুই ছক্কায় নাসুম আহমেদ করেন ২৪ বলে ২৫ রান। আল্লাহ গাজানফারের ধীরগতির বলে যখন ফিরেছেন নাসুম, দলের স্কোর তখন ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩০। তবে ৭ম উইকেট জুটিতে ততক্ষণে ৪১ বলে ৪৬ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেটাই শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকল বাংলাদেশ ইনিংসের টার্নিং পয়েন্ট। জাকের আলী অনিক শেষদিকে চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টার সুবাদেই বাংলাদেশ পার করল ২৫০ রানের ল্যান্ডমার্ক।

জাকেরের ব্যাট থেকে এসেছে কার্যকরী ৩৭ রান। ৩ ছক্কা আর ১ চারে গড়া তার এই ইনিংসের সুবাদেই বাংলাদেশের স্কোর হলো ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রান। সিরিজে সমতা আর শারজাহতে নিজেদের প্রথম জয়ের জন্য সেটাই হয়ে ছিল যথেষ্ট।