আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের বড় পরিবর্তন এসেছে। সরকার পতনের মাস আগস্টের প্রথম ১৫ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬ গুণ বেড়েছে। তাতে পুরো মাসের হিসেবে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেন যেকোনো সময়ের একক কোনো মাসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথমার্ধে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগের বছর তথা ২০২৩ সালের একই সময়ে ডিএসইতে বৈদেশিক লেনদেন ছিল মাত্র ৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ একই সময়ের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বেড়েছে ৫০১ শতাংশ বা ছয় গুণ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজারে আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছেন।
সূত্র বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টার্নওভার ছিল আট হাজার ৯১ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছরে এ অঙ্ক বেড়ে নয় হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা হয়। কিন্তু পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন নিম্নমুখী ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দুই হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। এমনকি আগস্টের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বৈদেশিক শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬২ কোটি টাকা। যা আগের পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পতনের পর দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখা গিয়েছে। এতে ডিএসইতে লেনদেন এবং সূচক উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৮ আগস্ট দেশের শেয়ারবাজারে সূচকের রেকর্ড উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন রেকর্ড ৩০৬ পয়েন্ট বা প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ৮৬২ পয়েন্ট বা সাড়ে ৫ শতাংশ।
২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের ওদিনই সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২৫ পয়েন্ট। প্রায় সাড়ে চার মাসের মধ্যে এটিই এ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। তবে তার পরবর্তী কার্যদিবসে প্রধান সূচক ৬ হাজারের ঘর স্পর্শ করে। পরবর্তী কার্যদিবস অর্থাৎ ১১ আগস্ট ডিএসইএক্সের পয়েন্ট ছিল ৬ হাজার ১৫।
শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারী নয়, শেখ হাসিনার পদত্যাগে দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা বেড়েছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, গত ১ আগস্ট শেয়ারবাজারে অর্থশূন্য বিও হিসাব ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৫৯৩টি। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টাকাবিহীন বিও হিসাবের সংখ্যা কমে এসেছে। আগস্ট মাসের সবশেষ কার্যদিবস, গত ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৪৩৪টি। অর্থাৎ কমে আসা এসব হিসাবের মধ্যে আগস্টে লেনদেন হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি; ব্যাংক খাতের সংস্কার; বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা এবং মানসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের।
এদিকে পুঁজিবাজারের অস্থিরতা ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে অনেকে আবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করাকে দুষছেন। তাদের মতে, বিএসইসির কৃত্রিমভাবে শেয়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করা দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি দুটো কোম্পানি রেখে বাকি সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়।