‘শেষ হওয়ায় কেঁদো না, বরং ঘটেছে বলে হাসো’

‘আমার মনে গেঁথে যাওয়া একটা কথা আপনাদের শোনাই, ‘‘শেষ হওয়ায় কেঁদো না, বরং এটা ঘটেছে বলে হাসো’’। আমি খুব সন্তুষ্টি নিয়ে এখান থেকে যাচ্ছি। এই পরিবারের সদস‍্য হতে পারা, এখানে ইতিহাস রচনা করা এবং ইতিহাসের অংশ হওয়া সম্মানের, আনন্দের।’ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে এভাবেই অনুভূতি জানালেন লুকা মদ্রিচ। কোচ কার্লো আনচেলত্তি নিজের ব্যক্তিত্ব ও ক্লাবের ইতিহাসগড়া স্মৃতি মিলিয়ে মুখে স্মৃত হাসির সঙ্গে অশ্রু লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলেন। কাঁদছিল বার্নাব্যুতে হাজির দর্শক, দীর্ঘদিনের শিষ্য, রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও।

বিদায়টা কার্যত কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তির। তিনি পুরোপুরি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্বে। অন্যদিকে, লুকা মদ্রিচ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সিতে শেষ টুর্নামেন্ট হিসেবে খেলবেন আসন্ন ক্লাব বিশ্বকাপে। গতকাল পুরো বার্নাব্যু প্রস্তুত ছিল আনচেলত্তিদের বিদায়ী আয়োজনে। নীরবে বিদায় ঘটে গেছে লুকাস ভাসকেজেরও। এমন আবেগঘন মুহূর্তে সরাসরি হাজির হয়েছিলেন কিংবদন্তি মিডফিল্ডার টনি ক্রুসও।

লা লিগায় গতকাল (শনিবার) মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এদিনই যে ক্লাব ছাড়তে চাওয়া কোচকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে সেই ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছিল। আবেগঘন পরিস্থিতিতে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে শুরু হয় ম্যাচটি। ম্যাচের পরতে পরতেও আনচেলত্তি, মদ্রিচ ও ভাসকেজের বিদায়ের মুহূর্ত যেন ক্ষণে ক্ষণে মনে উঠেছে সবার। কোচের বিদায়ী ম্যাচ জয় উপহার দেওয়াই তো কাম্য হওয়ার কথা রিয়াল শিবিরের। কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে সেটিও হয়েছে। সোসিয়েদাদ হেরেছে ২-০ গোলে।

আনচেলত্তি ক্লাবের ১২৩ বছরের ইতিহাসে সফলতম কোচ। ডাগআউটের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুই দফায়। সবমিলিয়ে রিয়ালকে জিতিয়েছেন ১৫টি শিরোপা। বর্ণাঢ্য এই অধ্যায়ে রিয়ালের এই ইতালিয়ান কোচ জিতেছেন তিনটি চ‍্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি ক্লাব বিশ্বকাপ, তিনটি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, দুটি লা লিগা, দুটি কোপা দেল রে, দুটি স্প‍্যানিশ সুপার কাপ ও একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ।

ম্যাচ পরবর্তী বিদায়ী সম্ভাষণে আনচেলত্তি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি ও গর্বিত, অসাধারণ একটা সময় কেটেছে। এখানে এই সময়ে যা কিছু ঘটেছে, এর কোনো কিছুই আমরা ভুলে যেতে পারি না। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে, লম্বা সময় ধরে অসাধারণ ক্লাবকে কোচিং করানোর গর্ব নিয়ে আমি বিদায় নিচ্ছি। রেয়াল মাদ্রিদ (আমার কাছে) নিজের বাড়ির মতো, একটি পরিবার। ছয় বছর ধরে ব‍্যাপারটি এমনই ছিল। শিরোপাগুলোর জন‍্য, এখানকার আবহর জন‍্য আমাদের সময় কেটেছে অসাধারণ।’

২০১২ সালে টটেনহ্যাম থেকে রিয়ালে যোগ দেওয়া মদ্রিচ লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে সবমিলিয়ে খেলেছেন ৫৯১ ম‍্যাচ। এই সময়ে ছয়টি চ‍্যাম্পিয়ন্স লিগসহ জিতেছেন ২৮টি শিরোপা। সামনে সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ক্লাব বিশ্বকাপে। তবে ঘরের মাঠে আর নামা হচ্ছে না তার। তাই তো বিদায়ে আবেগঘন হয়ে বললেন, ‘এই মুহূর্তটা আসুক, আমি কখনও চাইনি। তবে এটা ছিল সুদীর্ঘ, কিন্তু বিস্ময়কর এক অভিযাত্রা। সবার আগে আমি ক্লাব, ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে ধন‍্যবাদ জানাতে চাই। আমি ধন‍্যবাদ জানাতে চাই এখানে পাওয়া সব কোচ ও সতীর্থদের যারা সবসময় আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন এবং সেই সব মানুষদের, যারা আমাকে সাহায‍্য করেছে।’

এরপর মদ্রিচের শেষ কথাগুলো ছিল আরও ছন্দময়, ‘আপনাদের সবাইকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন‍্যবাদ। আমার পরিবারকে ধন‍্যবাদ। আমরা জিতেছি অনেক, আমরা কাটিয়েছি বিস্ময়কর অনেক মুহূর্ত। এই বছরগুলোতে আপনারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। আপনারা আমাকে যা দিয়েছেন, তার জন‍্য ধন‍্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমার মনে গেঁথে যাওয়া একটা কথা আপনাদের শোনাই, ‘শেষ হওয়ায় কেঁদো না, বরং এটা ঘটেছে বলে হাসো।’”