আমরা বর্তমানে রাষ্ট্র মেরামতের চেষ্টা করছি। যে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে বিগত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ছাত্র-জনতা নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, আমরা এখন নতুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করেছি। এই পর্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আমাদের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমি মনে করি, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে বিরোধ নেই। একটার সঙ্গে আরেকটা ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সংলাপে’ তিনি এ কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি এবং সবাই মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। বর্তমানে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আমরা শক্তিশালী হবো, কোনো অপপ্রচার চালিয়ে আমাদেরকে পিছিয়ে রাখা যাবে না।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর ইন্টেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, সমাজে নানান জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বসবাস থাকে, বিভিন্ন অভিরুচির মানুষ থাকে, সমাজে নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। যে সমাজ ও রাষ্ট্র এই বৈচিত্র্যকে সম্মান দেখিয়ে তা ধারণ করতে পারে সে সমাজ ও রাষ্ট্র সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে। এজন্য দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মিথস্ক্রিয়া। আমি মনে করি, সম্প্রীতির প্রবণতা সহজাত, যা আমরা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখতে পাই। কিন্তু আমরা তা মাঝে মাঝে ভুলে যাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে সংস্কারের দাবি জোরালো হচ্ছে এবং সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। আমরা আশা করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, যেখানে সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণী হলো সম্প্রীতি, শান্তি ও ভালোবাসা। বৌদ্ধ ধর্মের মর্মার্থ অনুযায়ী অহিংসার সমাজ গড়তে পারলে সমাজে সম্প্রীতি বজায় থাকবে, আর খ্রীষ্ট ধর্ম অনুযায়ী প্রেম ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারলে সমাজে হিংসা ও বিদ্বেষ থাকতে পারে না। আর ইসলাম ধর্মে আজানের মাধ্যমে কল্যাণময় সমাজ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। আমাদের শিল্প-সাহিত্যেও সাম্য ও সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে ভিন্ন ধর্মের মানুষ ও প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষার কথা বারবার ব্যক্ত করা হয়েছে। আমাদের সব ধর্মেই মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। আমাদের উচিত হবে এসব কথা বেশি বেশি প্রচার করা, সম্প্রীতির বার্তা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া। আমি মনে করি, ধর্মীয় নেতা ও তরুণরা সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। তবে সবার আগে পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের নিজেদের মধ্যে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের এজন্টেস অব চেঞ্জ প্রজেক্ট এবং পলিসি অ্যাডভাইজার ডিরেক্টর (অপারেশন্স) ড. চার্লস রীড, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের রিলিজিয়াস সেক্রেটারি স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, জেসাস কল চার্চ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ডেভিড বৈদ্য, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বিমল চন্দ্র চক্রবর্ত্তী, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর আহমেদ তাবসির চৌধুরী প্রমুখ।